এন্ড্রয়েড ফোনের নিরাপদ ব্যবহার

হাতে থাকা এন্ড্রয়েড ফোনটির সর্বোচ্চ যত্নশীলতার সাথে ব্যবহার

এন্ড্রয়েড ফোন
এন্ড্রয়েড ফোন

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের এন্ড্রয়েড ফোন ছাড়া থাকার অর্থ হল আদিম যুগে বাস করা। দৈনন্দিন জীবনে এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সতর্কতার পরিচয় দিই সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। অনেকের কাছে এন্ড্রয়েড ফোন স্রেফ বাচ্চাদের খেলনার মত,যেটির আদতেই কোন যত্ন নেই। দিনশেষে এই প্রয়োজনীয় জিনিসটি পরে থাকে বেযত্নে।আজকে আপনাদের সাথে এমন কিছুই ট্রিকস শেয়ার করব যেটি করে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটিকে আপনি দীর্ঘমেয়াদে এবং ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।এখন আলোচনা করব স্মার্টফোনের সাথে ঘটা আপনাদের কিছু বদ অভ্যাস নিয়ে।

১.অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার না করা

এন্ড্রয়েড ফোনের শো রুম থেকে আপনার হাতে থাকা এন্ড্রয়েড ফোনটি কেনার সময় তার সাথে আপনাকে একটি অরিজিনাল চার্জার দেয়া হয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সেই অরিজিনাল চার্জারটির সঠিক মুল্যায়ন আমরা করতে পারি না।কয়েকদিন পরেই সেটা হারিয়ে ফেলি।এই চার্জারের কতগুলো অনন্য সুবিধা রয়েছে।যেমন, আপনার এন্ড্রয়েড ফোনটি ফুল চার্জ হওয়ার পর ঐই চার্জার অটোমেটিক চার্জ সাপ্লাই অফ করে দিবে যাতে করে আপনার মোবাইল অতিরিক্ত গরম না হয়ে যায় বা ব্যাটারি ফুলে না যায়। কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময়ই ‌ অরিজিনাল চার্জারটি হারিয়ে যাওয়ার পরে বাজার থেকে কম দামি চার্জার কিনে এনে ফোন চার্জে দেয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাজার থেকে কিনে আনা চার্জারটি কখনোই অরিজিনাল চার্জারের মত সুবিধা দিতে পারে না।যার ফলে আমাদের ফোনের ব্যাটারি ফুলে যায়। মোবাইল বিস্ফোরিত হয়।তাই আমাদের সবসময়ই অরিজিনাল চার্জার ব্যাবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া নির্দিষ্ট ফোনের জন্য নির্দিষ্ট চার্জারই সুইটেবল হয়।

নকল চার্জার চেনার কিছু উপায়

আইফোন

কোন সন্দেহ নেই বর্তমানে আইফোন বাজারের সেরা এন্ড্রয়েড ব্র্যান্ড। কিন্তু বাজারের সেরা ব্র্যান্ড হলেও এর প্রথমে নজর দিতে হয় চার্জিং সিস্টেমের দিকে।বাজারে এখন অহরহ আইফোনের নকল চার্জার পাওয়া যায়।মনে রাখবেন আইফোনের চার্জারের গায়ে যদি 'ডিজাইনড বাই অ্যাপল ইন ক্যালিফোর্নিয়া' থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল চার্জার।নকল চার্জারের গায়ে কখনোই লেখাটি থাকে না। তাছাড়া আরো একটি উপায় আছে অ্যাপলের আসল আর নকল চার্জার যাচাইয়ের।নকল চার্জারের গায়ে অ্যাপলের যে লোগোটি থাকে তা আসল চার্জারের গায়ে থাকা অ্যাপলের লোগো অপেক্ষা অনুজ্জ্বল বর্ণের হয় এবং তা অপেক্ষাকৃত কালো হয়।এইসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে অ্যাপলের আসল আর নকল চার্জার থেকে বাঁচতে পারেন।

স্যামসাং

স্যামসাংয়ের আসল এবং নকল চার্জার চেনা একটু কঠিন।এর একটি উপায় হল যদি চার্জারের গায়ে এ+ শব্দটির সাথে মেইড ইন চাইনা লেখাটির সাথে চার্জারটির ধরন বা বৈশিষ্ট্য লেখা থাকলে চার্জারটি নকল।

হাওয়াই

হাওয়াইয়ের ক্ষেত্রে আসল এবং নকল চার্জার চেনা তুলনামূলক সহজ। এক্ষেত্রে আসল এবং নকল চেনার জন্য চার্জারের উপরের পৃষ্ঠার বারকোডের তথ্যের সাথে এডাপ্টারের প্রিন্টেড তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়।মিলে গেলে আসল চার্জার কিন্তু না মিললে সেটি নকল।

ওয়ান প্লাস

ওয়ান প্লাসের চার্জার যাচাই করাটা সহজ।রিয়েল চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ করলে একটি ফ্লাস জ্বলে উঠবে, যদি না জ্বলে তাহলে চার্জারটি নকল।

শাওমি ফোন

শাওমি ফোনের চার্জার যাচাই করাটা একটু অন্যরকম এবং ব্যতিক্রমী।এর আসল নকল যাচাই করা হয় দৈর্ঘ্য দিয়ে।শাওমি ফোনের চার্জারের দৈর্ঘ্য যদি ১২০ সেন্টি মিটারের বেশি বা কম হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল নয়।

২.এন্ড্রয়েড ফোনের স্ক্রীন লক রাখা

এটি একটি ইজি এবং সহজ টিপস।সচরাচর দেখা যায় সবাই এটি করে থাকে।এটি একটি ভালো অভ্যাস।স্ক্রীন লকিংয়ের ক্ষেত্রে এখনকার এন্ড্রয়েড ফোনগুলো বায়োমেট্রিক্স সুবিধা নিয়ে এসেছে।যার কারণে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে সাইবার জগৎ। কিন্তু আপনাকে সেটার সুবিধা নিতে হবে।ধরুন আপনার মোবাইলটি চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু চুরি হওয়ার পরেও আপনি যথেষ্ট সুযোগ পাবেন আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন রিমোভ করার জন্য।যেমন, আপনার ব্যাংক একাউন্ট,জি-মেইল একাউন্ট ইত্যাদি। আজকাল গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই জি-মেইল একাউন্টের উপর নির্ভর করে।আপনি আরেকটি ডিভাইসে আপনার জি-মেইল একাউন্ট এবং ঐ একাউন্টের পাসওয়ার্ড  দিয়ে  লগ-ইন করে আপনার জি-মেইল একাউন্টটি কোন কোন ডিভাইসে এভেইলেবল আছে তা ডিজেবল করতে পারবেন।এতে আপনার উপকার হবে অনেক। কারণ চুরি হয়ে যাওয়া আপনার এন্ড্রয়েড ফোনটিতে ঐ জি-মেইল একাউন্টটি ডিজেবল করে দেওয়াই আপনার পার্সোনাল তথ্যসমূহ সুরক্ষিত থাকবে। যদিও এটি একটি সময়সাপেক্ষ এবং মোটামুটি জটিল পদ্ধতি।তবে এ সংক্রান্ত অনেক টিউটরিয়াল ইউটিউবে আছে।আপনারা চাইলে দেখে নিতে পারেন।

৩.ট্রাস্টেড সোর্স থেকে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপসগুলো ডাউনলোড করা

এখানে ট্রাস্টেড সোর্স বলতে বোঝানো হচ্ছে গুগল প্লে স্টোর।আমাদের নিত্যপ্রয়োজনে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার প্রয়োজন। এখন এই সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে অনেক থার্ডপার্টি সফটওয়্যার বা বিভিন্ন ক্ষতিকর সফটওয়্যার থাকতে পারে যা এন্ড্রয়েড ফোনের ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু গুগোল প্লে স্টোরের অ্যাপস গুলো মোটামুটি নিরাপদ। তাই সেখান থেকেই বিভিন্ন অ্যাপস ইনস্টল করা উচিত। এসব সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে অনেক হ্যাকিং সফটওয়্যার আছে যেগুলো আমাদের পার্সোনাল ইনফরমেশন এর মধ্যে অ্যাক্সেস নিয়ে নেয়। যেমন আপনি একটি গেমিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করলেন। কিন্তু সেই সফটওয়ারটি আপনার কাছ থেকে পারমিশন চাচ্ছে আপনার ফাইল ম্যানেজার বা গ্যালারির। তাহলে নিঃসন্দেহে এটি একটি ক্ষতিকর অ্যাপ। কারণ একটি গেমিং সফ্টওয়ারের কখনোই এন্ড্রয়েড ফোনের ফাইল ম্যানেজার বা গ্যালারির মধ্যে এক্সেসের প্রয়োজন হয় না। এভাবেই একটি ক্ষতিকর সফ্টওয়্যার আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন লীক করতে পারে।সেজন্য বিভিন্ন অ্যাপস ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সোর্স বা উৎস হল গুগল প্লে স্টোর। কারণ গুগল প্লে স্টোর বিভিন্ন অ্যাপস কে জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রে এর প্রোপার কোডিং আছে কিনা সেটা যাচাই করে। পাশাপাশি কোন ফিশিং লিংক ইনক্লুডেড কিনা সেটাও যাচাই করা হয়।

৪.বিভিন্ন‌ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যাবহার করা

এখনকার এন্ড্রয়েড ফোন গুলো খুবই আপডেটেড। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনগুলো তাদেরই নিজস্ব এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডেভেলপ করে এন্ড্রয়েড ফোনের সিস্টেমের সাথে দিয়ে দেয়। অর্থাৎ বাইরে থেকে আর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যাবহারের প্রয়োজন পড়ে না। তবুও এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ঐ এন্ড্রয়েড ফোনটির ব্র্যান্ড থেকে সরাসরি ইনস্টলড না থাকলে আপনারা এভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি এন্ড এন্টিভাইরাস এবং নরটন মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপস ব্যাবহার করতে পারেন।এই অ্যাপসগুলো‌ আপনার এন্ড্রয়েড ফোনের ম্যালওয়ার চিহ্নিত করবে এবং সেগুলো দূর করবে।

৫.এন্ড্রয়েড ফোন আপডেট রাখা

আপনার হাতে থাকা এন্ড্রয়েড ফোনটিকে লেটেস্ট ভার্সনে আপডেট রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। এন্ড্রয়েড ফোন আপডেট এবং এর সংশ্লিষ্ট সকল অ্যাপস সমূহের আপডেট আপনাকে অনেক ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার এর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এন্ড্রয়েড ফোনের আপডেট ভার্সন আসে আগের ভার্সন এর দুর্বলতা সমূহ চিহ্নিত করে পরবর্তী ভার্সনে তাকে সংশোধনী দেওয়া হয়। সুতরাং এটি এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৬. এন্ড্রয়েড ফোনে পাসওয়ার্ড সেভ করে না রাখা

আমাদের মধ্যে অনেকেই পাসওয়ার্ড এন্ড্রয়েড ফোনে সেভ করে রাখি যাতে করে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা অর্থাৎ সাইন ইন করা আগের তুলনায় সহজ হয়। অর্থাৎ আপনি যদি পাসওয়ার্ডটি ভুলেও যান তবু যাতে আপনার কোন সমস্যা না হয়। এটি একটি ভাল পদ্ধতি কিন্তু এটির অসুবিধাও আছে। কারণ হ্যাকারদের জন্য মোবাইলে সেভ করে রাখা পাসওয়ার্ড জেনে ফেলা অনেক সহজ এবং এটি দিয়ে তারা আপনার পুরো মোবাইলটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৭.স্মার্টফোনে কেস ব্যবহার

কোনো স্মার্টফোনের স্ক্রিন ভালো থাকাটা খুবই জরুরি।আর স্ক্রিন ভালো রাখতে কেস ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।কেস ছাড়া স্মারটফোনের স্ক্রিনে দাগ পড়ে যেতে পারে বা ভিতরকার কোন চিপ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৮.সঠিক চার্জিং সিষ্টেম

মোবাইল ফোনের চার্জিংটাই মোবাইল ফোনের মূল হিসেবে ধরা হয়। অনেক ব্যবহারকারীই ঝুঁকি নিয়ে তাদের মোবাইল ফোনটা চার্জ দিয়ে থাকে।যেমন, অনেকেই সারা রাত ধরে মোবাইল চার্জ দিয়ে থাকে।এটা কখনোই করা উচিত নয়। যদিও এখনকার এন্ড্রয়েড ফোনগুলোতে অটো চার্জিং ডিজেবলড অপশনটি আছে। তবুও সারা রাত ধরে চার্জ দিলে মোবাইল প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চার্জ হয়ে যায়। কিন্তু মোবাইলের নেটওয়ার্ক সবসময় চলমান থাকে। নেটওয়ার্ক একটি তরঙ্গ।এটি কোনসময় বাড়ে এবং কোনসময় কমে।যার ফলে মোবাইল সবসময় একটি কাজের মধ্যে থাকে এবং তা মোবাইলের ব্যাটারির উপর প্রভাব ফেলে।ফলে মোবাইল থেকে কিছু পরিমাণ চার্জ কমে যায়। কিন্তু ফোনের সাথে চার্জার কানেক্টেড থাকায় চার্জ আবার ফুল হয়। এভাবে মোবাইল ক্রমাগত একটি কাজের মধ্যে থাকে সারারাত।যার ফলে ব্যাটারি গরম হয়ে যায় এবং যেকোন সময় বিস্ফোরণের মত ঘটনা ঘটতে পারে।তাই মোবাইল চার্জিংয়ের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এক্সপার্টদের মতে,ব্যাটারির চার্জ ৫% -১০% এর নিচে আসলে চার্জার কানেক্ট করা এবং ২০%-৩০% এর বেশি থাকলে কানেক্ট না করাই উত্তম।

৯.এনড্রয়েড গ্লাস স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার 

এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য বড় বাধা হল একটি ভাঙা স্ক্রিন। কিন্তু সমস্যাটি প্রথমেই চাইলে শেষ করে ফেলা যায়।একটি নতুন এন্ড্রয়েড ফোন কেনার সাথে সাথে যদি একটি গ্লাস স্ক্রিন প্রোটেক্টর লাগিয়ে ফেলা হয় তাহলে বিভিন্নভাবে সুবিধা পাওয়া যায়।যেমন, মোবাইলের টাচ সেন্সরকে ঠিক রাখাসহ ইন্টার্নাল গ্লাসকে সবসময় আঘাতহীন রাখা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url