মুখের ব্রণ-ঘরোয়া পদ্ধতিতে শতভাগ কার্যকর উপায়ে দূর করার উপায়
পিম্পল বা ব্রণ
হল মুখের অতি সূক্ষ্ম ছিদ্রে তেল, ব্যাকটেরিয়া সহ বিভিন্ন জৈব বস্তুর জমাট বাধা অবস্থা যেসব স্কিন থেকে ফুলে উঠে আলাদাভাবে অস্তিত্বের জানান দেয়। পিম্পল বিভিন্ন ব্যাক্তিভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
মুখের ব্রণ আমাদের খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের চিন্তার প্রধান কারণ থাকে এই মুখের ব্রণ কিভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে। অনেকেই অনেক উপায় অবলম্বন করে থাকেন আবার অনেকেই শুধু প্রকৃতির উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ব্রণ দূর করার জন্য। কিন্তু আসলে দুইটারই সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন এক্ষেত্রে।বয়সন্ধিকালে এই সমস্যাটা দেখা দেয় সবার মধ্যে। সেক্ষেত্রে মুখের ব্রণ সমস্যাকে অনেকটাই প্রকৃতিগত বলা যায়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পর যখন মুখের ব্রণ যায় না তখন সমস্যাটি আর স্বাভাবিক থাকে না।আজকে আলোচনা করব ব্রণ সমস্যা দূরীকরণের কিছু পদ্ধত ি সম্পর্কে।
পিম্পল না হওয়ার কতগুলো প্রি-কন্ডিশন হল:
- স্কিন হাইজিন মেইন্টেইন করা। যেমন দিনে অন্তত দুবার ফেইসওয়াশ বা হালকা সাবান দিয়ে মুখের অতিরিক্ত তেল বা বিভিন্ন ডার্ট ধুয়ে ফেলা। তবে অতিরিক্ত ঘষাঘষি করা যাবে না।
- বারবার মুখে হাত দেওয়ার বদ অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। এটি করা যাবে না। কারণ হাত হল বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আঁতুড়ঘর।
- প্রত্যেকদিন চুল পরিষ্কার রাখা। আমাদের অনেকেরই চুল আছে অনেক লম্বা যেগুলো প্রায়ই সামনে এসে পড়ে। মুখ থেকে সবসময় চুলকে দূরে রাখতে হবে।
- মেয়েদের ক্ষেত্রে সবসময় হেভি মেকআপ পরিত্যাগ করতে হবে। এটি প্রায়সময়ই পিম্পলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হেভি মেকআপের বদ অভ্যাস অনেকেরই থাকে। অবিলম্বে এটি ত্যাগ করা উচিত যথাসম্ভব চেহারাকে স্পটবিহীন রাখার জন্য।
- পিম্পল হয়ে গেলে এটিকে ধরে মুচড়ানো, টিপা ইত্যাদি করা যাবে না। এতে করে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে বা আরও বেশি হয়ে যেতে পারে।
- নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য খুব বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। একই কথা স্কিনের গ্লো বাড়ানোর জন্যও খাটে।
- ফ্রুটস এবং ভেজিটেবলগুলো যথাসম্ভব তাজা হওয়া প্রয়োজন। পিম্পল দূর করার কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের মধ্যে রয়েছে লেবু ব্যবহার। লেবুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুজীব যেমন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ন্যাচারাল প্রোটেকশন। যার কারণে অনেক ডাক্তারই পিম্পল তাড়াতে লেবু ব্যাবহারের পরামর্শ দেন।
ব্রণের উপর বরফ লাগানো
অনেকেই হয়তো এই পদ্ধতিটার কথা জানেন আবার অনেকেই হয়তো জানেন না। খুবই যুগোপযুগী এবং ম্যাজিকাল একটা পদ্ধতি ব্রণ দূর করার জন্য। কিছু বরফ কোনো শুতি কাপড়ে মুড়িয়ে ব্রণ সহ মুখের ওই ফোলা জায়গাটার উপর লাগানো। যাতে করে সদ্য গজিয়ে উঠা ব্রণের ফ্লেমিং টা কমিয়ে দেওয়া যায়। এটি খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি। যদি বরফ খুব তাড়াতাড়ি গলে যায় তাহলে ফ্রিজে যেসব বরফ টুকরা করার প্যান পাওয়া যায় সেসবে বরফ করে তারপর লাগানো।
বেদনানাশক অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের চূর্ণ লাগানো
মুখের ফোলা ভাব তথা ব্রণের জন্য অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের চূর্ণ লাগানো মারাত্মক কার্যকর একটি পদ্ধতি। এতে করে যে ফোলা ভাবটা থাকে সেটা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের প্রভাবে কমে যায়। তাছাড়া অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট মুখের মধ্যে জমা অতিরিক্ত তেলের বিরুদ্ধেও খুবই কার্যকর কারণ অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট এ থাকে সিলিসিক অ্যাসিড। প্রথমে এরকম দুটি ট্যাবলেটকে চূর্ণ করা তারপর দুই এক ফোঁটা পানি যোগ করে সেটাকে পেস্টে পরিণত করতে হবে। তারপর সেটা সরাসরি মুখের ব্রণের উপর তথা ফোলা জায়গাটার উপর লাগাতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট সেটি মুখের উপর রেখে তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখের ব্রণ দূর করার জন্য এটি প্রমাণিত পদ্ধতি।
ব্রণ দূর করতে ব্যাতিক্রমি একটি পদ্ধতি : সিলিসিলিক এসিড এবং বেনজয়েল পারঅক্সাইড
কোন একটা সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার চিন্তাকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে হবে। আপনার সেই সমস্যা সমাধানের জন্য অপশন বেশি রাখা যাবে না। কারণ এতে করে আসলে কোন সমাধানের পদ্ধতিতেই আপনার জোর দেওয়া হয়ে ওঠে না। ঠিক একইভাবে ব্রণ সমস্যা দূরীকরণের জন্য যে দুটি উপাদান ওষুধের কথা বলব তার প্রথমটি সিলিসিলিক এসিড যার কথা আগেই বলা হয়েছে। এখন বাকি থাকে বেনজয়েল পারঅক্সাইড।
বেনজয়েল পারঅক্সাইড মুখের ডেড স্কিনের মৃত কোষকে দূর করে এবং সেই সাথে অতিরিক্ত তেল থেকে মুক্তি মেলে এটি ব্যবহার করলে। এসব হল অনেকটাই বেনজয়েল পারঅক্সাইড ব্যবহারের অপশনাল উপকার। এর আসল উপকার হল আপনার পিম্পল তথা ব্রণের ব্যাকটেরিয়াকে বেনজয়েল পারঅক্সাইড শেষ করে দেয়। আপনি ব্রনের জন্য সিলিসিলিক এসিড এবং বেনজয়েল পারঅক্সাইড এর মধ্যে যেকোন একটাকে ব্যবহার করতে পারেন যেটি আপনার স্কিনের সাথে যায়।
কিন্তু এটাও সত্যি এই দুই ব্রণ প্রতিরোধী কেমিক্যালের কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। যেমন এর ড্রাইং ইফেক্ট। আবার এদের অতিরিক্ত ব্যবহার বা দুইটাকে একসাথে কম্বিনেশন করে ব্যবহার মুখের স্কিনে জ্বালা ধরাতে পারে। এক্ষেত্রেও সাবধান হওয়া উচিত। প্রস্তুতি পর্যায়ে বিশেষজ্ঞরা ০.৫% থেকে ২% সিলিসিলিক এসিড ব্যডহারের পরামর্শ দেয়। আবার বেনজয়েল পারঅক্সাইড ব্যবহার করলে সূর্যের মধ্যে বেশি বের হওয়া চলবে না। কারণ এর ড্রাইং ইফেক্ট। নতুন কিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতিতে ব্যবহার করাই ভালো। কারণ শরীরের তার সাথে অভিযোজন বা এডজাস্টমেন্টের একটা ব্যাপার থাকে।
মেকআপের সাথে সিলিসিক এসিড ব্যবহার
এই পদ্ধতিটা মেয়েদের জন্যই খুব বেশি প্রযোজ্য হবে। মেয়েদের মধ্যে মেকআপের স্বভাবজাত প্রবণতা আছে। কেমন হয় যদি সেই মেকআপ আর ফেস পাউডারের মধ্যে ব্রণ প্রতিরোধী উপাদান যেমন সিলিসিক এসিডের মিশ্রণ থাকে। তাহলে এক কাজেই অনেক কাজ হয়ে যায়। একই সাথে মেকআপ এবং ব্রণ দূর করা। হা এরকমই কিছু মেকআপ ব্র্যান্ডের নাম হল নিউট্রোজেনা , ই.এল.এফ এবং ক্লিনিক। এসব কোম্পানি এধরনের মেকআপ তৈরি করে। আবার কারো স্কিনে যদি ড্রাইং ইফেক্ট সভস্যা থাকে তাহলে হিয়ালোরিক এসিডের ব্যবহার করা যায় যেটি স্কিনের ড্রাইং ইফেক্ট প্রতিরোধী সেই সাথে আপনার স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করবে এই হিয়ালোরিক এসিড।
তবে আপনি যাই ব্যবহার করেন না কেন সেসব প্রোডাক্ট ক্লিনিক্যালি টেস্টেড কিনা দেখতে হবে। কারণ অনেকের স্কিনে এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে তাই তাদের আরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ব্রণ প্রতিরোধী ফেস মাক্স ব্যবহার
বর্তমানে সব জায়গায় ফেস মাস্ক এভেইলেবল। বিশেষ করে এখনকার ফেস মাস্কগুলো তৈরি করা হয় এন্টি-পিম্পল পারপাসকে সামনে রেখেই। তাই ফেস মাস্ক ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়। ব্রণ প্রতিরোধী বিভিন্ন উপাদান যেমন সিলিসিলিক এসিড এবং বেনজোয়েল পারঅক্সাইডের মতোই আরেকটি উপাদান হল সালফার। এটিও প্রায় একই পদ্ধতিতে কাজ করে। মূলত সেন্সিটিভ স্কিনের জন্য সালফার উপকারী। যাদের স্কিনে ড্রাই ইফেক্ট বা এ ধরনের সমস্যা থাকে তাদের জন্য এটি একটি বেটার চয়েস। আগে কেমিক্যালের প্রোডাকশন ম্যাটেরিয়্যাল লিস্টে এন্টি-ব্যাকটেরিয়্যাল এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট ম্যাটেরিয়্যাল আছে কিনা সেটি যাচাই করা উচিত।
মুখের ব্রণের ট্রিটমেন্টের আরেকটি প্রাকৃতিক ঔষধ হল চা গাছের তেল ব্যবহার। এর এন্টি-ব্যাকটেরিয়্যাল এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট দুইটি বৈশিষ্ট্যেই রয়েছে। ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
শেষ উপায় হিসেবে ব্রন থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে কর্টিজন ইনজেকশন নেওয়া
ব্রণ থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পেতে, যাদের ব্যাপকভাবে মুখে ব্রন, খুব তাড়াতাড়িই এসব থেকে মুক্তির প্রয়োজন তাদের ব্যাপারে সর্বোত্তম উপায় হল কর্টিজন ইনজেকশন নিয়ে নেওয়া। একজন ডার্মাটোলজিস্ট খুবই সূক্ষ্ম একটি সুই দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন। এটি সরাসরি ব্রনের ভিতরে ফুলে থাকা টিস্যুর উপর ইজেক্ট করা হয়। ফলাফল চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই পাওয়া যায়। মুখে আর ব্রণ বলতে কিছু থাকে না।
উপরে বর্ণিত উপায় গুলোর সাহায্যে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে ব্যাখা করা হয়েছে। কিন্তু যাদের স্কিন অতিরিক্ত খারাপ তাদের ব্যাপারে আরও এক্সট্রিম কিছু প্রয়োজন হতে পারে।