কোষ বিভাজন [ HSC admission ]। জীববিজ্ঞান চ্যাপ্টার-০২
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোষ বিভাজন চ্যাপ্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যাপ্টার। প্রত্যেক বছর বেশকিছু প্রশ্ন হয় এখান থেকে। কাজেই কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না চ্যাপ্টারটিকে। বিশেষ করে মনে রাখার কৌশল জানলে কোষ বিভাজন থেকে যাই আসুক না কেন ফুল মার্কস পাওয়া সম্ভব।
কোষ বিভাজন
কোষ বিভাজন তিন প্রকার। অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস। অ্যামাইটোসিস হল খুবই সরল প্রক্রিয়া অর্থাৎ সোজাসুজি ঘটে। অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়া ঘটে তিনটা প্রাণিতে। ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট আর অ্যামিবায় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)
মাইটোসিস ঘটে দেহকোষে। দেহকোষের আরেক নাম হল সোমাটিক কোষ ( পরীক্ষায় আসে)।
মায়োসিস ঘটে জনন মাতৃকোষে। অনেকেই ভুল করে লিখে আসে মায়োসিস ঘটে জনন কোষে। জনন কোষ হল শুক্রাণু বা ডিম্বানু। এরা হ্যাপ্লয়েড। তাই এখানে মায়োসিস ঘটে না। জনন মাতৃকোষ ডিপ্লয়েড হওয়ায় এখানে মিয়োসিস বিভাজন ঘটে।
যেসব জায়গায় কোষ বিভাজন ঘটে না
# জনন কোষ
# পেশি কোষ
# স্নায়ু কোষ
# রক্ত কোষ বা রক্ত কণিকা
উপরের চারটি পয়েন্ট পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব কোষ শুধু আকারে বড় হয় বিভাজন ঘটে না।
একনজরে কোষচক্র
কোষ বিভাজন একটি মোটামুটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাই এটি হতে হলে আগে কোষে কিছুটা প্রস্তুতির দরকার হয়। এই প্রস্তুতিকালকে বিভিন্ন ফেজে ভাগ করা হয়।
প্রথমে কোষটি বিভাজিত হয়। এই বিভাজনে খুবই কম সময় লাগে। মাত্র ৫ থেকে ১০ %।
এর পরের ধাপ হল G1 ফেজ। এখানে কোষ বিভাজনের জন্য কিছু প্রস্তুতিমূলক প্রোটিন তৈরি হয়। যার মধ্যে অন্যতম হল সাইক্লিন প্রোটিন। CDK নামক এক ধরনের প্রোটিনের সাথে মিলে এটি কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে।
এর পরের ধাপটি হল S-phase বা Synthetic phase। Synthetic শব্দের অর্থ হল তৈরি হওয়া। এখানেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হয় এবং তা হল DNA অণুলিপন এবং এটিই কোষ চক্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সেই সাথে এর সময়কালও অনেক বেশি।
সবচেয়ে পরের ধাপ হল G-2 phase। এখানে প্রয়োজনীয় শক্তি তথা ATP তৈরি হয়।
মাইটোসিসের ধাপসমূহ ( only for admission )
প্রোফেজ ধাপে ক্রোমাটিন তন্তুগুলো জল বিয়োজন করে সেন্ট্রোমিয়ার যুক্ত ক্রোমাটিডে পরিণত হয়। তারপর প্রো-মেটাফেজ ধাপে সেগুলো ক্রোমোসোমাল নৃত্য করে বিষুবীয় অঞ্চলে আসতে শুরু করে। (তার পরের ধাপ মেটাফেজে এগুলো সম্পূর্ণভাবে বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান করে যাকে মেটাকাইনেসিস বলে)। [তাহলে মেটাকাইনেসিস হয় মেটাফেজ ধাপে। (পরীক্ষায় আসে)]
ক্রোমোজোমের বিভিন্ন আকৃতি যেমন V আকৃতি তথা মেটাসেন্ট্রিক, L আকৃতি তথা সাবমেটাসেন্ট্রিক, J আকৃতি বা অ্যাক্রোসেন্ট্রিক, I আকৃতি বা টেলোসেন্ট্রিক ইত্যাদি পর্যায় দেখা যায় অ্যানাফেজ পর্যায়ে।
মুক্ত নিউক্লিয়ার বিভাজন : কোনো কোনো কোষে শুধু নিউক্লিয়াসের বিভাজন চলতে থাকে কোন ধরনের সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ছাড়াই। এমনকি দেখা যায় একটা কোষের ভিতর ১২০০ কিংবা ১৩০০ নিউক্লিয়াস। এ ধরনের বিভাজনকে বলা হয় মুক্ত নিউক্লিয়ার বিভাজন। প্রাণিকোষে এ ধরনের বিভাজনকে বলা হয় প্লাজমোডিয়াম (পরীক্ষায় অসংখ্যবার এসেছে)।
অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস
[সাধারণত সাইক্লিন প্রোটিন CDK প্রোটিনের সাথে মিলে কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও আরেকটি প্রোটিন কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে তা হল P-53। এটি যদি নষ্ট হয় তাহলে শরীরে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন চলতে থাকে। যার ফলাফল হল ক্যানসার বা টিউমার।]
পুষ্টির অভাবে কোষের মৃত্যুকে বলা হয় ন্যাক্রোসিস।
কোষের স্বাভাবিক বা জেনেটিক মৃত্যু হল এপোপ্টোসিস।
মিয়োসিস পর্যায়
মিয়োসিসে কোন প্রো-মেটাফেজ ধাপ নেই। মিয়োসিসের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এখানে নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে দুবার কিন্তু মাইটোসিসে নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে একবার। আর ক্রোমোজোমের বিভাজন সবসময় একবারই ঘটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিটেনের জন্য মাইটোসিস এবং মিয়োসিসের পার্থক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাইটোসিস এবং মিয়োসিস এই দুই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ইন্টারফেজ দেখা যায়। ইন্টারফেজ হল প্রস্তুতি পর্যায়। মিয়োসিসের ইন্টারফেজ ক্ষণস্থায়ী। মিয়োসিসের উপধাপ হল পাঁচটি। এই পাঁচটিই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়োসিসের পাঁচটি উপধাপের মধ্যে মহাগুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল লেপ্টোটিন। এটি প্রথম পর্যায়। এখানে ক্রোমোজোমগুলোকে ফুলের মতো দেখায়। অর্থাৎ সামান্য পেঁচানো থাকে। "এই ধাপে ক্রোমোজোমগুলোর মধ্যে ছোট ছোট দানার মত দেখা যায় যেগুলোকে বলা হয় ক্রোমোমিয়ার"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে বহু ক্রোমোমিয়ার কোন ধাপে দেখা যায়?? উত্তর হবে লেপ্টোটিন।
লেপ্টোটিনের পরের ধাপটি হল জাইগোটিন। এখানে ক্রোমোজোমগুলো জোড় বাঁধা শুরু করে। "একটি মাতৃ ক্রোমোজোম এবং একটি পুরুষ ক্রোমোজোম কাছাকাছি চলে আসে। এই কাছাকাছি আসার প্রক্রিয়াটার নাম হল সিন্যাপসিস এবং জোড় বাধা ক্রোমোজোমগুলোকে বলা হয় বাইভ্যালেন্ট"। ( সিন্যাপসিস এবং বাইভ্যালেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই কমন একটি প্রশ্ন)
জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন চ্যাপ্টারের এডমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নোট
প্যাকাইটিন উপধাপ
বলতে গেলে মায়োসিসের সব গুরুত্বপূর্ণ ধাপই এখানে ঘটে। জাইগোটিন উপপর্যায়ে বাবার ক্রোমোজোম এবং মায়ের ক্রোমোজোমের অনুলিপি তৈরি হয়। অর্থাৎ বাবার ক্রোমোজোমের মত আরেকটি ক্রোমোজোম এবং মায়ের ক্রোমোজোমের মত আরেকটি ক্রোমোজোম তৈরি হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে। তাহলে মোট ক্রোমোজোম সংখ্যা হয়ে যায় চারটি যাকে বলা হয় টেট্রাড।
এরপর বাবার একটি ক্রোমোজোম এবং মায়ের একটি ক্রোমোজোম কাছাকাছি আসে ও একটি আরেকটির উপর উঠে যায় বা ওভারল্যাপিং ঘটায়। [যার ফলে বাবার এবং মায়ের ক্রোমোজোম দুটির একটি 'X' অবস্থানের সৃষ্টি হয়। একে বলে কায়াজমা।]
তখন ক্রোমোজোম দুটির কায়াজমা সৃষ্ট অংশ দুটির বিনিময় ঘটে যাকে বলা হয় ক্রসিং ওভার। ক্রসিং ওভার ঘটে কায়াজমা অংশে নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে। এগুলো সব হয় প্যাকাইটিন উপধাপে।
ক্রসিং ওভার কি এবং ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব রিটেন প্রশ্নে আসতে পারে। ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব-
# জেনেটিক ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি হয় ক্রসিং ওভারের কারণেই।
# বৈশিষ্ট্য এবং জিনগত পরিবর্তন তৈরি হয়
# বৈশিষ্ট্য এবং জিনগত পরিবর্তন তৈরি হলে স্বভাবতই বংশগত প্রকরণ সৃষ্টি হবে
# জেনেটিক ম্যাপ তৈরি করে। জেনেটিক ম্যাপ দেখেই বুঝা যায় পিতা এবং মাতার বৈশিষ্ট্য।
ক্রোমোজোমের প্রান্তীয়করণ ঘটে ডিপ্লোটিন উপপর্যায়ে। কখনো কখনো এটি ৯০° বা ১৮০° হয়।
এর পরের ধাপ ডায়াকাইনেসিসে নিউক্লিয়োলাস এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের অবলুপ্তি ঘটে। ( মেডিকেল, ডেন্টাল এবং ইউনিভার্সিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ )।
আরো দুটি চ্যাপ্টারের এডমিশন রিভিউ
প্রাণির পরিচিতি HSC admission। ঘাসফড়িং ও রুই মাছ
প্রাণির বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস [ HSC admission ] । জীববিজ্ঞান ২য় পত্র চ্যাপ্টার-০১
সর্বশেষ কথা
এই পোস্টে যা লিখা হয়েছে সব কোষ বিভাজন চ্যাপ্টার থেকে ছেঁকে নেওয়া হয়েছে। যা বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার জন্য খুবই দরকারি। পাশাপাশি এর অধিকাংশ ক্রেডিট উদ্ভাস উন্মেষকেই দেওয়া যায়।