প্রাণির পরিচিতি HSC admission। ঘাসফড়িং ও রুই মাছ
বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল এডমিশনের জন্য প্রাণির পরিচিতি চ্যাপ্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বড় অধ্যায়ও বটে। তাই এটির উপর এডমিশন প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য কৌশলে পড়তে হবে। তাই বিস্তৃত পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তথা মেডিকেলে আসে এমন বিষয়গুলো খুব চমৎকারভাবে আলোচনা করা হয়েছে
ঘাসফড়িং
পৃথিবীতে প্রায় বিশ হাজার প্রজাতির ঘাসফড়িং শনাক্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের এ পর্যন্ত বিশ প্রজাতির ঘাসফড়িংয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঘাসফড়িং Insecta শ্রেণীভুক্ত প্রাণী কারণ এদের দেহে মুক্ত রক্ত সংবহনতন্ত্র বিদ্যমান এবং এরা ম্যালপিজিয়ান নালিকার মাধ্যমে রেচন ক্রিয়া সম্পন্ন করে। ঘাসফড়িং পরিযায়ী হয়ে দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে এবং এটি তৃণভোজী বা শাকাশী প্রাণি।
ঘাসফড়িংয়ের বাহ্যিক গঠন
- ঘাসফড়িং-এর দেহ দিপার্শ্বীয় প্রতিসম। বহিকঙ্কাল হাইপোডার্মিসে নিচে এবং প্রত্যেক দেহখণ্ডকে বলা হয় স্ক্লেরাইট।
- ঘাসফড়িং-এর উপাঙ্গগুলো নড়াচড়া করতে পারে সূচারের উপস্থিতির কারণে।
- ঘাসফড়িং এর দেহের তিনটি অঞ্চলের মধ্যে মস্তিষ্ক বহন করে পুঞ্জাক্ষি, অ্যান্টেনা ও মুখোপাঙ্গ। বক্ষ তিনজোড়া পা ও দুইজোড়া ডানা এবং উদর শ্বাসরন্ধ্র এবং জননাঙ্গ সমূহ বহন করে।
- ঘাসফড়িং-এর মস্তকের বহিকঙ্কালকে বলা হয় এপিক্রেনিয়াম।
- ঘাসফড়িং এর পুঞ্জাক্ষির একক ওমাটিডিয়া।
- ঘাসফড়িং-এ ওসেলি বা সরলাক্ষি থাকে তিনটি।
- ঘাসফড়িং এর মুখোপাঙ্গ হল ম্যান্ডিবুলেট মুখোপাঙ্গ। এদের অ্যান্টেনা ২৫ খন্ডকে বিভক্ত।
- ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গ
- ঘাসফড়িং এর উপরের ওষ্ঠ গঠন করে ল্যাব্রাম।
- মেক্সিলার সবচেয়ে গোড়ার অংশকে বলা হয় কার্ডো।
- ম্যাক্সিলারি পাল্প একত্রে অ্যান্টেনা ও পায়ের অগ্রভাগ পরিস্কারে, খাদ্যবস্তু হরণ প্রতিরোধে এবং সংবেদী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
- দ্বিতীয় জোড়া ম্যাক্সিলির প্রতিনিধি মনে করা হয় ল্যাবিয়ামকে।
- ল্যাবিয়াম মেন্টাম ও সাবমেন্টাম এই দুই ভাগে বিভক্ত।
- উপযুক্ত খাদ্য নির্বাচনের সাহায্য করে ল্যাবিয়াল পাল্প।
- খাদ্যবস্তুকে লালার সাথে মেশাতে সাহায্য করে হাইপোফ্যারিংক্স।
- ঘাসফড়িং-এর অগ্রবক্ষের টারগাম অংশটিকে বলা হয় প্রোনোটাম।
ঘাসফড়িংয়ের ডানা
ঘাসফড়িংয়ে মোট দুই জোড়া পাতলা কিউটিকল নির্মিত ডানা রয়েছে। মধ্যবক্ষীয় ডানাকে এলিট্রা, ডানার আবরণ বা টেগমিনা বলা হয়।
ঘাসফড়িংয়ের পা
পা মোট তিনজোড়া। পায়ের অংশগুলো যথাক্রমে
ঘাসফড়িংয়ের পায়ের বিভিন্ন অংশ |
- কক্সা
- ট্রোক্যান্টার
- ফিমার
- টিবিয়া
- টার্সাস
পায়ে পালভিলাস নামক আসনজন প্যাড থাকে। লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে বিধায় ঘাসফড়িং-এর পাকে সেলটাটোরিয়াল পা বলা হয়।
ঘাসফড়িংয়ের উদর
ঘাসফড়িং এর উদর ১১ টি খণ্ডকে বিভক্ত। এখানে কোন প্লিউরন থাকেনা। শ্রবণ থলিকে ঘিরে রাখে টিমপেনিক পর্দা। ঘাসফড়িং এর শ্বাসরন্ধ্র থাকে আট জোড়া যথাক্রমে প্রথম থেকে অষ্টম দেহ খণ্ডক পর্যন্ত। স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের উদরের নবম খন্ডক ওভিপজিটর গঠন করে। পুরুষ ঘাসফড়িংয়ের একাদশ খণ্ডক অ্যানাল প্লেট গঠন করে। পুরুষ ঘাসফড়িং এর দশম খন্ডকে থাকে দুটি অ্যানাল সারকি।
ঘাসফড়িংয়ের ওভিপজিটর |
ঘাসফড়িংয়ের এর সিলোম
ঘাসফড়িংয়ের পৌষ্টিকতন্ত্র
- স্টোমোডিয়াম কাইটিন নির্মিত এবং ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত।
- খাদ্যবস্তুর প্রথম পরিপাকের সূচনা ঘটে পৌষ্টিকনালির ক্রপে লালার এনজাইম দ্বারা।
- ছটি দাঁত ও ছটি অনুলম্ব ভাঁজ নিয়ে গিজার্ড বা প্রোভেন্ট্রিকুলাস গঠিত। গিজার্ড খাদ্যকে চূর্ণ করে এবং খাদ্য মেসেন্টেরনে প্রবেশের সময় ছাকনির মতো কাজ করে।
- মেসেন্টেরন ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম স্তর থেকে সৃষ্ট এবং এর অন্তপ্রাচীর পেরিট্রফিক পর্দা দিয়ে গঠিত। মেসেন্টেরন এবং স্টোমোডিয়ামের সংযোগস্থলে ছয় জোড়া ফাঁপা গ্যাস্ট্রিক সিকা বা হেপাটিক সিকা থাকে। ঘাসফড়িংয়ের খাদ্যের গ্লুকোজের অধিকাংশই হেপাটিক সিকাতে পরিশোষিত হয়। মেসেন্টেরনের অন্ত-প্রাচীর অসংখ্য ভিলাই গঠন করে। ভিলাই খাদ্যরস শোষন করে।
- প্রোক্টোডিয়ামে রয়েছে যথাক্রমে ইলিয়াম, কোলন এবং রেক্টাম বা মলাশয়। রেকটামে ছয়টি রেকটাল প্যাপিলা রয়েছে।
- ঘাসফড়িংয়ের পায়ুছিদ্র থাকে দশম দেহখণ্ডকের অঙ্কীয় দেশে।
ঘাসফড়িংয়ের পৌষ্টিকগ্রন্থি
ঘাসফড়িংয়ের রক্ত সংবহনতন্ত্র
- ঘাসফড়িংয়ের হৃৎযন্ত্র অবস্থান করে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে।
- পৌষ্টিকনালি অবস্থান করে পেরিভিসেরাল সাইনাসে।
- স্নায়ুরজ্জুর অবস্থান পেরিনিউরাল সাইনাসে।
- দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, রক্ত ও লসিকা ধারণ করে হিমোসিল।
- কোনো শ্বাসরঞ্জক না থাকায় ঘাসফড়িংয়ের রক্ত তথা হিমোলিম্ফ বর্ণহীন। হিমোলিম্ফ রস এবং হিমোসাইট বা প্লাজমা এই দুই উপাদান নিয়ে হিমোলিম্ফ গঠিত।
- ঘাসফড়িংয়ের হিমোলিম্ফে থাকে বেশি ইউরিক এসিড, ট্রেহালোজ, ডাইগ্লিসারাইড।
- হিমোসাইট দেহের বিভিন্ন কঠিন পদার্থ ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করে।
- ঘাসফড়িংয়ের কোষীয় তরলের অভিস্রবণিক চাপের ভারসাম্য রক্ষা করে রক্তরসে সঞ্চিত পানি।
- বিভিন্ন জীবাণু ধ্বংস করে হিমোসাইট।
- ডানার সঞ্চালন ও খোলস মোচনে সহায়তা করে রক্ত।
- ঘাসফড়িংয়ের হৃৎযন্ত্র সাত প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট।
- হৃৎযন্ত্রের প্রকোষ্ঠগুলোতে থাকে ত্রিভুজাকৃতির অ্যালারি পেশি। হৃৎপেশি টিস্যু বা পেসমেকার থাকে না।
- ঘাসফড়িংয়ের হৃৎযন্ত্রকে বলা হয় নিউরোজেনিক হার্ট।
- ঘাসফড়িংয়ের হৃৎযন্ত্রের স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার।
- ঘাসফড়িংয়ের সমগ্র দেহে একবার রক্ত প্রবাহ সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট।
ঘাসফড়িংয়ের শ্বসনতন্ত্র
ঘাসফড়িং এ শ্বাসরন্ধ বা পায়রাক্ষল ১০ জোড়া। ট্রাকিয়াল তন্ত্রের উন্মুক্ত ছিদ্রপথ এই শ্বাসরন্ধ গুলো। পেরিট্রিম নাম ক প্রাচীরে শ্বাসরন্দ্র গুলো পরিবেষ্টিত।
- ঘাসফড়িংয়ের প্রধান শ্বসন অঙ্গ ট্রাকিয়া। এটি সমগ্র দেহে শ্বসনিক গ্যাস পরিবহন করে।
- ট্রাকিওলের অন্তপ্রাচীরে ইন্টিমা থাকে না।
- ত্বকের অন্তপ্রবর্ধক হলো ট্রাকিয়া।
- বাতাসের চাপ হ্রাস পেলে ট্রাকিয়াকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে টিনিডিয়া।
- ঘাসফড়িংয়ের শ্বাসত্যাগ একটি নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া।
- প্রথম চারজোড়া শ্বাসরন্ধ্র প্রশ্বাসী শ্বাসরন্ধ্র এবং শেষ ছয়জোড়া নিশ্বাসী শ্বাসরন্ধ্র।
ঘাসফড়িংয়ের রেচনতন্ত্র
ঘাসফড়িংয়ের প্রধান রেচন অঙ্গ ম্যালপিজিয়ান নালিকা। আনুষঙ্গিক রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে ইউরেট কোষ, ইউরিকোজ গ্রন্থি, নেফ্রোসাইট ও কিউটিকল।
- ঘাসফড়িংয়ের প্রায় ১০০ টির মতো ম্যালপিজিয়ান নালিকা থাকে।
- ম্যালপিজিয়ান নালিকার মাইক্রোভিলাই সম্মিলিত ভাবে ব্রাশ বর্ডার গঠন করে।
ঘাসফড়িংয়ের সংবেদী অঙ্গ
- ঘাসফড়িংয়ের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থিত ছোট রোম ও ব্রিসল স্পর্শেন্দ্রীয় হিসেবে কাজ করে।
- ঘাসফড়িংয়ের অ্যান্টেনা হলো ঘ্রাণেন্দ্রীয়।
- ঘাসফড়িং ম্যাক্সিলারি পাল্প ও ল্যাবিয়ামের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুর স্বাদ গ্রহণ করে।
- শ্রবণ থলি বা টিমপেনাম শ্রবণেন্দ্রিয় হিসেবে কাজ করে। পায়ু সারকিতে অবস্থিত রোমও একই কাজ করে।
- ঘাসফড়িংয়ের তাপেন্দ্রিয় হিসেবে কাজ করে প্লান্টুলি প্যাড।
ঘাসফড়িংয়ের পুঞ্জাক্ষি
- পুঞ্জাক্ষির একক তথা ঘাসফড়িংয়ের দর্শন একক ওমাটিডিয়াম। ওমাটিডিয়ামকে ধারণ করে ভিত্তি পর্দা।
- ওমাটিডিয়ামের কর্নিয়া লেন্সের মতো কাজ করে। কর্নিয়া সৃষ্টি হয় কর্নিয়াজেন কোষ থেকে।
- ওমাটিডিয়ামের প্রতিসরণশীল অঙ্গ হিসেবে কাজ করে ক্রিস্টালাইন কোণ।
- রেবডোমের মাধ্যমে আলো গৃহীত হয়। রেটিনুলার কোষের ক্ষরণ থেকে রেবডোম গঠিত।
- উজ্জ্বল বা তীব্র আলোতে ঘাসফড়িংয়ের ওমাটিডিয়ামে মোজাইক প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। এটি সুস্পষ্ট ও পৃথক।
- অনুজ্জ্বল বা স্তিমিত আলোতে সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। এটি স্পষ্ট ও ঝাপসা।
- স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের শুক্রধানি বা স্পার্মাথিকায় শুক্রাণু সাময়িকভাবে জমা থাকে।
- ঘাসফড়িংয়ের ডিম্বাণুটি কুসুম সমৃদ্ধ এবং কোরিওন ও ভাইটেলাইন ঝিল্লি দিয়ে আবৃত।
- শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশ করার ছিদ্রটিকে মাইক্রোপাইল বলে।
- ঘাসফড়িংয়ের ১০ টি ডিমের গুচ্ছে মোট ২০০ টি ডিম থাকে।
- শীতকালে ঘাসফড়িংয়ের পরিস্ফুটন বন্ধ থাকে, একে ডায়াপজ কাল বলে।
ঘাসফড়িংয়ের রূপান্তর
- ঘাসফড়িংয় ও তেলাপোকার রূপান্তর অসম্পূর্ণ রূপান্তর।অসম্পূর্ণ রূপান্তরের শিশু অবস্থায় প্রাণিকে নিম্ফ ফলে।
- মৌমাছি ও প্রজাপতির রূপান্তর সম্পূর্ণ রূপান্তর। সম্পূর্ণ রূপান্তরের শিশু অবস্থায় প্রাণিকে লার্ভা বলে।
- পঞ্চমবার খোলস মোচনে নিম্ফ পরিণত ঘাসফড়িংয়ে রূপান্তর হয়।
- ঘাসফড়িংয়ের খোলস মোচন বা মোল্টিং নিয়ন্ত্রণ করে একডাইসন হরমোন।
- ঘাসফড়িংয়ের করপোরা অ্যালাটা গ্রন্থি থেকে জুভেনাইল হরমোন ক্ষরিত হয়।
রুই মাছ
( রুই মাছের মাথায় কোন আইশ না থাকায় এদের কার্প জাতীয় মাছ বলা হয় )। এর মাথায় নাসারন্ধ্র থাকে। আর রুই মাছের শ্বসন তন্ত্রের নাম হল ফুলকা। ফুলকাকে ঢেকে রাখে কানকো। রুই মাছের ফুলকার সংখ্যা হল চার জোড়া। এসব নিয়েই আসলে রুই মাছের শ্বসনতন্ত্র। এর চেয়ে আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ নেই।
কানকোর নিচের কিনারায় একটি পাতলা ব্রাঙ্কিওস্টেগাল পর্দা যুক্ত থাকে। (very very important for medical and university)। এদের পুচ্ছ পাখনা হল হোমোসার্কাল। অর্থাৎ এদের পুচ্ছপাখনার প্রত্যেকটা অংশ সমান। এটাও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রুই মাছের আইশ
( মনে রাখতে হবে আইশ হল রুই মাছের প্রধান প্রতিরক্ষাকারী অঙ্গ )। রুই মাছের আইশ হল বৃত্তাকার তথা সাইক্লয়েড। এর কেন্দ্রকে বলা হয় ফোকাস। "আইশ ব্যাসার্ধ বরাবর বৃদ্ধি পায়। তাই রুই মাছের আইশে আল তৈরি হয়। আর সেই আইলকে বলা হয় সার্কুলাস বা বৃদ্ধি লাইন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকবার এসেছিল)"।
রুই মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্র
রুই মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্রের সবচেয়ে বড় প্রকোষ্ঠের নাম হল অ্যাট্রিয়াম। রুই মাছের অ্যাট্রিয়ামে সবসময় ভেইন প্রবেশ করে যার আরেক নাম সাইনাস ভেনোসাস এবং ভেন্ট্রিকল থেকে বাল্বাস আর্টারিওসাস নামক আর্টারি বের হয়।
সাইনাস ভেনোসাস দিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত ঢুকবে এবং সেই একই কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্তই বের হয়ে যাবে। সেজন্য রুই মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্রকে একপক্ষীয় রক্তপ্রবাহ বা শিরা হৃৎপিন্ড বলা হয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিটেন প্রশ্ন)।
এখন প্রশ্ন হল এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাহী রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে বের হয়ে কোথায় যায় ? উত্তর হল ফুলকায় যায়। কারণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে সারা দেহে বাহিত হলে রুই মাছ মারা যাবে। ফুলকায় গিয়ে সেই রক্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়। যেই রক্ত বাহিকা দিয়ে ফুলকায় যায় রক্ত সেই বাহিকাটার নাম হল অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি। যে ধমনি দিয়ে ফুলকা থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সারা দেহে বাহিত হবে সেটা হল বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি।
বায়ুথলি (অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ)
বায়ুথলির কাজ হল প্লবতা রক্ষা করা এবং শব্দ গ্রহণ। বায়ুথলির সম্মুখ এবং পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠের মধ্যে "নিউম্যাটিক নালি" যুক্ত থাকে সম্মুখ প্রকোষ্ঠে। নিউম্যাটিক নালি হল বায়ুপূর্ণ নালি যা শব্দগ্রহণে সাহায্য করে কারণ এটি অন্তকর্ণের মিবেরিয়ান অসিকলসের সাথে যুক্ত থাকে ( এখান থেকে প্রশ্ন হয় )। শব্দ উৎপাদন, প্লবতা রক্ষা, মাছকে পানিতে স্থির রাখা ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজের মধ্যে বায়ুথলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল এটি অক্সিজেনের আঁধার হিসেবে কাজ করে।
৭২ ঘন্টা বয়সী পোনাকে রেণু পোনা বলা হয় অথবা ৪ দিন বয়সী পোনাকে রেণু পোনা বলা হয়। লার্ভা দশার ৯৬ ঘন্টা পর একটি লার্ভা দেখতে রুই মাছের মতো হয়ে যায়। যাকে ধানী পোনা বা আঙ্গুলিপোনা বলা হয়।
রুই মাছ থেকে ঢাবির রিটেনের জন্য রুই মাছের ক্লাসিফিকেশন, নিউম্যাটিক নালি গুরুত্বপূর্ণ ।
আরো দুটি চ্যাপ্টারের রিভিউ এডমিশনের জন্য
- প্রাণির বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস [ HSC admission ] । জীববিজ্ঞান ২য় পত্র চ্যাপ্টার-০১
- কোষ বিভাজন [ HSC admission ]। জীববিজ্ঞান চ্যাপ্টার-০২
হাইড্রা
স্বাদুপানির পলিপ বলা হয় হাইড্রাকে এবং ডিপ্লোব্লাস্টিক প্রাণি। পৃথিবীতে হাইড্রা প্রজাতির সংখ্যা ৪০ টির মতো। বাদামী বর্ণের হাইড্রা Hydra oligactis এবং সবুজ বর্ণের Hydra viridissima। Hydra মুক্তজীবী প্রাণি।
- হাইড্রার অযৌন জনন মুকোলোদগম এবং দ্বি-বিভাজন। হাইড্রার পুনরুৎপত্তি ক্ষমতা প্রচন্ড। মুকুল সৃষ্টি এবং মাতৃ হাইড্রা থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন জীবন যাপন করতে তিন সপ্তাহ সময় লাগে।
- দেহ অরীয় প্রতিসম।
- হাইড্রার মুখছিদ্র থাকে হাইপোস্টোমে।
- কর্ষিকা ও নেমাটোসিস্ট আহার সংগ্রহ, চলন ও আত্মরক্ষার কাজ করে।
- হাইড্রার দেহে মুকুল সৃষ্টি হয় গ্রীষ্মকালে।
- হাইড্রার ডিম্বাশয় গোলাকার এবং শুক্রাশয় কোণাকার। এগুলো দেখা যায় হেমন্ত ও শীতকালে।
- হাইড্রার গ্লাইডিং চলন বা অ্যামিবয়েড চলন সম্পন্ন করে চাকতির ক্ষণপদ গঠনকারী কোষ।
হাইড্রার কোষসমূহ
হাইড্রার এপিডার্মিসের কোষসমূহ হলো-
- পেশি-আবরণী কোষ
- ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ
- সংবেদী কোষ
- স্নায়ু কোষ
- গ্রন্থি কোষ
- জনন কোষ
- নিডোসাইট
এপিডার্মিসে পুষ্টি কোষ, ক্ষণপদীয় কোষ, ফ্ল্যাজেলীয় কোষ অনুপস্থিত।
গ্যাস্ট্রোডার্মিসের কোষসমূহ যথাক্রমে -
- পুষ্টি কোষ
- গ্রন্থি কোষ
- ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ
- সংবেদী কোষ
- স্নায়ু কোষ
গ্যাস্ট্রোডার্মিসে জনন কোষ ও নিডোসাইট অনুপস্থিত। এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসের মধ্যবর্তী স্তর মেসোগ্লিয়া।
হাইড্রার এপিডার্মিসের কোষসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
হাইড্রার এপিডার্মিস গঠন করে কিউটিকল। পুরুত্ব বরাবর মেসোগ্লিয়ার ওপর অবস্থান করে পেশি-আবরণী কোষ। মায়োনিম হলো নমনীয় ও সঙ্কোচন প্রসারণশীল তন্তু। নিডোব্লাস্ট ধারণ করে কর্ষিকা। পেশি আবরণী কোষের মিউকাস দানা সমৃদ্ধ অংশ শ্বসনে অংশ নেয়।
হাইড্রার হাইপোস্টোমের নিচের দিকের বৃদ্ধি এলাকা গঠন করে ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ। হাইড্রার দেহের সকল কোষ ৪৫ দিন পরপর ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় যাকে টটিপোটেন্সি বলে।
পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনা গ্রহণ করে সংবেদী কোষ। সংবেদী কোষের উদ্দীপনা সারা দেহে ছড়ায় স্নায়ু কোষ।
হাইড্রার গ্রন্থি কোষ কোনো বস্তুর সাথে লেগে থাকতে, বুদবুদ সৃষ্টি করতে এবং খাদ্য গলাধঃকরণে সাহায্য করে।
জনন কোষ অবস্থান করে জননাঙ্গে। একটি স্ফীত মস্তক, সংকীর্ণ মধ্যখন্ড এবং বিচলনক্ষম লেজ নিয়ে হাইড্রার শুক্রাণু গঠিত। পরিণত ডিম্বাণুর বেলায় এর সাথে তিনটি পোলার বডি থাকে।
হাইড্রার পদতলে নিডোসাইট কোষ থাকে না।
নিডোসাইটের গঠন
নিডোসাইট কোষের মুক্তপ্রান্তে থাকে নিডোসিল এবং অভ্যন্তরে প্যাচানো সুতার মতো নেমাটোসিস্ট। নিডোসিল একটি রূপান্তরিত সিলিয়াম এবং এটি ট্রিগারের মতো কাজ করে।
নিডোসাইট ঢাকা থাকে অপারকুলাম নামক ঢাকনা দিয়ে। নিডোসাইটের নেমাটোসিস্টে ৩ টি বড় কাটার মতো বার্ব থাকে। অভ্যন্তরের গহ্বরটি বিষাক্ত রস হিপনোটক্সিনে ভর্তি থাকে। হিপনোটক্সিন প্রোটিন ও ফেনলে গঠিত। নিডোসাইটের কাজ হলো শিকার ধরা এবং শিকারকে অসাড় করে ফেলা। নিডোসাইটের শ্রেণিতাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে।
নেমাটোসিস্টের প্রকারভেদ
নিডারিয়া জাতীয় প্রাণিদের দেহে ২৩ ধরনের নেমাটোসিস্ট শনাক্ত করা হয়েছে। চার ধরনের নেমাটোসিস্ট হাইড্রায় পাওয়া যায়। তা যথাক্রমে-
- স্টিনোটিল বা পেনিট্র্যান্ট
- ভলভেন্ট বা ডেসমোনিম
- স্ট্রেপটোলিন গ্লুটিন্যান্ট
- স্টেরিওলিন গ্লুটিন্যান্ট
পেনিট্র্যান্টের ভিতরেই হিপনোটক্সিন থাকে। ভলভেন্ট নিসৃত হওয়ার সাথে সাথে কর্ক স্ক্রুর মতো অনেক প্যাচের সৃষ্টি করে। স্টেরিওলিন গ্লুটিন্যান্ট হলো ক্ষুদ্রতম নেমাটোসিস্ট। নেমাটোসিস্টের সূত্রক একবার নিক্ষিপ্ত হলে সেটিকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। ৪৮ ঘন্টার ভিতর নতুন নিডোসাইট সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবহৃত নিডোসাইট প্রতিস্থাপিত হয়।
হাইড্রার গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর
- হাইড্রার পরিপাক বহিঃকোষীয় পরিপাক
- সিলেন্টেরন একদিকে খাদ্য পরিপাক এবং অন্যদিকে খাদ্যসার, শ্বসন ও রেচন পদার্থ পরিবহন করে।
- সিলেন্টেরনকে ব্লাইন্ড স্যাক বা ব্লাইন্ড গাট বলা হয়।
হাইড্রার খাদ্যগ্রহণ ও পরিপাক
- হাইড্রা মাংসাশী (carnivorous) প্রাণি। হাইড্রার খাদ্য তালিকায় আছে সাইক্লপস, ড্যাফনিয়া, মাছের ডিম ইত্যাদি। তবে প্রধান খাদ্য হলো ক্ষুদ্র ক্রাস্টাসীয় সন্ধিপদী।
- হাইড্রা গ্লুটাথিওন নামক পদার্থ উপস্থিত আছে এমন প্রাণিকে শিকার করে।
- হাইড্রার খাদ্যগহ্বরে লিপিড ও শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। শুধু প্রোটিনের পরিপাক হয়।
- হাইড্রার গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার বা পরিপাক গহ্বরে ট্রিপসিন আমিষ জাতীয় খাদ্যকে অ্যামিনো এসিডে, লাইপেজ স্নেহজাতীয় খাদ্যকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে, অ্যামাইলেজ শর্করাকে গ্লুকোজে পরিণত করে।
- হাইড্রা শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য পরিপাক করতে পারে না।
- পরিপাককৃত খাদ্যসার হাইড্রার দেহে বাহিত হয় ব্যাপন প্রক্রিয়ায়।
হাইড্রার চলন
- হাইড্রা লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করে লুপিং বা হামাগুড়ি চলনের মাধ্যমে। যার আরেক নাম জোঁকা চলন বা শুয়োপোকা চলন। লুপিং চলনে হাইড্রা তার দেহের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক দূরত্ব অতিক্রম করে।
- হাইড্রার দ্রুত চলন প্রক্রিয়া হলো সমারসল্টিং বা ডিগবাজী। সমারসল্টিং চলনে হাইড্রা তার দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণ দূরত্ব অতিক্রম করে।
- গ্লাইডিং চলনের আরেক নাম অ্যামিবয়েড চলন প্রক্রিয়া যা ঘটে ক্ষণপদীয় কোষের সাহায্যে।
- হাইড্রার পাদ-চাকতির কোষ থেকে গ্যাসীয় বুদবুদ তৈরি হয় ভাসা বা floating প্রক্রিয়ায়।
- কর্ষিকাগুলোকে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত করে সাতার প্রক্রিয়ায়।
- হাইড্রার আরোহণ ও অবরোহণ সম্পন্ন হয় হামাগুড়ি প্রক্রিয়ায়।
হাইড্রা সর্বদা 20°C তাপমাত্রা বিশিষ্ট শীতল পানি পছন্দ করে।