জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন চ্যাপ্টারের এডমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নোট

এডমিশনের জন্য জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন চ্যাপ্টারটি থেকে প্রত্যেক বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রশ্ন থাকে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক ইউনিট এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। তাই জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন চ্যাপ্টারটি না পড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার অর্থ বোকামি। এই আর্টিকেলটিতে সম্পূর্ণভাবে চ্যাপ্টারটির এডমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে

জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন HSC জীববিজ্ঞান

জিন হল DNA অণুর একটি খন্ডাংশ যা বংশ থেকে বংশান্তরে জীবের বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য বহন করে। নিউক্লিয়াস হল কোষের কেন্দ্র। নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম আর সেই ক্রোমোজোমে থাকে DNA। মনে রাখতে হবে জিন হল DNA অণুর একটি খন্ডাংশ, RNA অণুর নয়। এটি এডমিশন টেস্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রোমোজোমের যেই অবস্থানে জিন থাকে তাকে বলা হয় লোকাস

জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন চ্যাপ্টারটি পড়ার আগে যাকে আমাদের অবশ্যই স্মরণ করতে হবে তিনি হলেন গ্রেগর জোহান মেন্ডেল যদিও তার জীবদ্দশায় তিনি এর স্বীকৃতি পান নি। তিনি অস্ট্রিয়ার অধিবাসী ছিলেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানীর নাম হল ভিয়েনা। তিনি দীর্ঘ সাত বছর গবেষণা করেন মটরশুটি নিয়ে। মটরশুঁটির বৈজ্ঞানিক নাম হল Pisum Sativum। খুবই গুরত্বপূর্ণ ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য।

গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের মটরশুটি গাছকে বেছে নেওয়ার কারণ হল মটরশুটি গাছ একবর্ষজীবি। অর্থাৎ এক বছর বাঁচে। তাই জোহান মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় নি। একই সাথে মটরশুটি গাছের ফুলগুলো আকারে বড় এবং ফুলগুলো উভলিঙ্গ। তাছাড়া মটরশুটি গাছের বহু প্রকরণ পাওয়া যায়।

ম্যান্ডেলের প্রথম সূত্র

সংকরায়ণ ঘটানোর সময় যদি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জিনগুলো পরস্পর মিশ্রিত না হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে কিন্তু জনন কোষ তৈরি হওয়ার সময় পৃথক হয়ে যায়। এটি হল মেন্ডেলের প্রথম সূত্র

যেমন, পরীক্ষাটি গিনিপিগ নিয়ে করা যায়। ধরা যাক একটা কালো গিনিপিগ যার জিনোটাইপ হল BB। আরেকটি বাদামি গিনিপিগ যার জিনোটাইপ হল bb। এখন দুইটার মধ্যে যদি সংকরায়ণ ঘটানো হয় তাহলে F1 জনুতে Bb এবং Bb জিনোটাইপের দুইটি গিনিপিগ পাওয়া যাবে যার দুইটিই হবে কালো। এখন F2 জনুতে যদি আবার ঐই দুইটা গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটানো হয় তাহলে চারটা গিনিপিগের মধ্যে তিনটা পাওয়া যাবে কালো আর একটি পাওয়া যাবে বাদামি। তাহলে মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের ফিনোটাইপ অনুপাত হল ৩:১ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন টেস্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ)।

মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের ব্যতিক্রম হল অসম্পূর্ণ প্রকটতা, যেটি‌ সন্ধ্যামালতীতে দেখা যায় এবং এর ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ১:২:১

মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের আরেকটি ব্যতিক্রম হল সমপ্রকটতা এবং এটি আন্দালুসিয়ান মোরগ মুরগীদের মধ্যে দেখা যায় যার ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ১:২:১

লিথাল জিন বা মারণ জিনের ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ২:১। লিথাল জিনের প্রভাবে ঘটিত রোগগুলো হল হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া এবং জন্মগত ইকথিওসিস প্রভৃতি। লিথাল জিন হোমোজাইগাস অবস্থায় থাকবে ( somehow important )যেসব লিথাল জিনের প্রভাবে ৫০% এর বেশি জীব মারা যায় তাদেরকে সেমিলিথাল জিন বলে। ৫০% এর কমসংখ্যক মারা গেলে সেসব জিন হল সাবভাইটাল জিন। ড্রসোফিলা মাছির লুপ্তপ্রায় ডানা সৃষ্টিকারী জিন হল সাবভাইটাল ধরনের 

মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রটি স্বাধীনভাবে মিলনের সূত্র নামে পরিচিত। এর ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ৯:৩:৩:১

পরিপূরক জিন : মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রের ব্যতিক্রম হল পরিপূরক জিন। পরিপূরক জিনের ফিনোটাইপিক অনুপাত ৯:৭। মিষ্টি মটর উদ্ভিদে এই স্ট্রেইন পাওয়া যায়। মিষ্টি মটর উদ্ভিদটির নাম হল lathyrus odoratus। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশনের জন্য এই নামটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জিনগুলো প্রকট থাকে।

lathyrus odoratus নামক এই মিষ্টি মটর উদ্ভিদের কারণে মানুষের শরীরে একটি রোগ সৃষ্টি হয় যার নাম lathyrism। মিষ্টি মটর উদ্ভিদটিকে যদি না ভিজিয়ে খাওয়া হয় তাহলেই এই রোগটি হয়। রোগটির ফলে অনেক সময় পেশি কাজ করে না বা‌ পেশিতে ব্যথা হয়। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ভিতর থাকা বিষ বা টক্সিনগুলো চলে যায়। ( exceptional example from out of text )।

প্রকট এপিস্ট্যাসিস : কোন জিন যদি অপর জিনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাঁধা দেয় তাকে প্রকট এপিস্ট্যাসিস বলে আর যে জিনটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাঁধা পায় তাকে হাইপোস্ট্যাটিক জিন বলে। যে জিনটি বাঁধা দেয় তাকে বলা হয় এপিস্ট্যাটিক জিন। প্রকট এপিস্ট্যাসিসের অনুপাত হয় ১৩:৩

দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিস : প্রচ্ছন্ন এলিল যখন প্রকট এলিলকে বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাঁধা দেয় তাকে বলা হয় দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিস। মানুষের মূক-বধিরতা দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিসের উদাহরণ। এর ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ৯:৭। মেডিকেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন টেস্টের জন্য প্রত্যেকটির ফিনোটাইপিক অনুপাত মুখস্ত থাকতে হবে।

পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্স 

ভর্তি পরীক্ষার জন্য পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্স কাকে বলে সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্সের ফিনোটাইপিক অনুপাত মনে রাখা। পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্সের ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ১:৪:৬:৪:১। পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্স শব্দ দুটির ভিতরেই এটির কাকে বলে লুকিয়ে আছে। পলি অর্থ হল দুইয়ের অধিক। দুইয়ের অধিক জিনের কারণে যে বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয় তাকে পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্স বলে। যেমন গায়ের রং, মানুষের উচ্চতা ইত্যাদি দুয়ের অধিক জিন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেমন নিগ্রোদের গায়ের রং খুবই কালো কিন্তু ককেশীয়রা হল শ্বেতাঙ্গ বা সাদা। নিগ্রোদের গায়ের ত্বকে মেলানিন নামের এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ রয়েছে যা রং কালো হওয়ার জন্য দায়ী কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের তা দেখা যায় না। পলিজেনিক ইনহ্যারিটেন্স ডিজঅর্ডারের দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহ হল অটিজম, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস টাইপ-২ ইত্যাদি।

সেক্স-লিংকড ডিজঅর্ডার

সেক্স-লিঙ্কড ক্রোমোজোমের মাধ্যমে যদি বংশপরম্পরায় বিভিন্ন রোগ বা ডিজঅর্ডার সঞ্চালিত হয় তাকে সেক্স-লিঙ্কড ডিজঅর্ডার বলে। মানুষে এ পর্যন্ত ৬০ টি সেক্স-লিঙ্কড জিন পাওয়া গেছে

X ক্রোমোজোমের কারণে ঘটিত রোগগুলো হল- লাল-সবুজ বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া, ডুসেনি মাস্কুলার ডিসট্রফি। Y লিঙ্কড বৈশিষ্ট্য হল-কানের লোম।

বিভিন্ন সেক্স-লিঙ্কড ডিসঅর্ডারের বিবরণ

লাল-সবুজ বর্ণান্ধতা : এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি লাল আর সবুজ বর্ণের পার্থক্য বুঝতে পারে না। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৮% এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রায় ০.৫% এই রোগে আক্রান্ত হয়।

হিমোফিলিয়া : রক্ত জমাট বা রক্ত তঞ্চন বিলম্বিত হয়। যার ফলে ক্ষতস্থান থেকে অবিরাম রক্ত ক্ষরিত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। X ক্রোমোজোমের প্রচ্ছন্ন মিউট্যান্ট জিনের কারণে এটি ঘটে থাকে।হিমোফিলিয়া দু'ধরনের :

১. ক্লাসিক হিমোফিলিয়া বা হিমোফিলিয়া A : রক্ততঞ্চনের ৮ নম্বর ফ্যাক্টর বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর উৎপন্ন না হলে ক্লাসিক হিমোফিলিয়া ঘটে থাকে।

২. খ্রিস্টমাস হিমোফিলিয়া বা হিমোফিলিয়া B : রক্ততঞ্চনের নয় নম্বর ফ্যাক্টর বা প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাসটিন কম্পোনেন্ট অনুপস্থিত থাকলে এই রোগটি ঘটে থাকে।

হিমোফিলিয়া সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল পুরুষরা হয় হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয় অথবা স্বাভাবিক থাকে কিন্তু কখনো বাহক হয় না। বাহক হয় মেয়েরা।

ডুসেনি মাসক্যুলার ডিসট্রফি : এটি খুবই খারাপ, ভয়ংকর এবং জঘন্য সেক্স-লিঙ্কড ডিজঅর্ডার। পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং সাধারণত দশ বছর বয়সেই চলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ২০ বছর বয়সের মধ্যেই মারা যায়। তিরিশেরও বেশি মাসক্যুলার ডিসট্রফি রয়েছে। প্রধানত কঙ্কালিক এবং হৃৎপেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে এ রোগ হতে দেখা যায়। দেহে প্রায় তিন হাজার পেশি প্রোটিন রয়েছে। সবচেয়ে হৃদয় বিদারক বাস্তবতা হল এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই।

লক্ষণ : এ রোগের লক্ষণ হল অস্থিসন্ধি বেশি আক্রান্ত হয়। সামান্য ব্যয়ামেই অস্থিসন্ধি থেকে রক্ত বের হয়। এই অবস্থা হল হেমারথ্রোসিস।

নিচে কতগুলো বিভিন্ন ধরনের ডিজঅর্ডারের লক্ষণ দেওয়া হল

  1. রাতকানা : রাতে দেখতে না পাওয়া।
  2. ফ্রাজাইল X সিনড্রোম : অটিজম এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণ।
  3. টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন : ছেলে ধীরে ধীরে মেয়েতে পরিণত হয়।
  4. হাইপারট্রাইকোসিস : শরীরে অতিরিক্ত লোমের উপস্থিতি।
  5. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস : ঘন ঘন মূত্রত্যাগ, শারীরিক দূর্বলতা ইত্যাদি।
  6. অপটিক অ্যাট্রফি : অপটিক নার্ভ বা দৃষ্টি স্নায়ুর দূর্বলতা।
  7. মায়োপিয়া : ক্ষীণদৃষ্টি।

উপরের চার্টটি ইউনিভার্সিটি এডমিশনের জন্য খুবই দরকারি। এর মধ্য থেকে একটা প্রশ্ন থাকবেই।

বর্ণান্ধতা

বিজ্ঞানী জন ডাল্টন মানুষের বর্ণান্ধতা সম্পর্কে বিবরণ প্রকাশ করেন। মানুষের চোখে দুই ধরনের অপটিক সেল বা কোষ রয়েছে। তাদেরকে বলা হয় কোন কোষ এবং রড কোষ। তন্মধ্যে কোন কোষ যেকোন ধরনের রংকে চিহ্নিত করতে সরাসরি দায়ী। বর্ণান্ধতায় এই কোন কোষ উৎপাদনকারী জিন প্রচ্ছন্ন থাকে বিধায় কোন কোষ উৎপন্ন হয় না। লাল-সবুজ বর্ণান্ধতা শনাক্ত করা যায় ইশিহারা কালার টেস্টের মাধ্যমে।

ব্লাড গ্রুপ

১৯৬১ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কার করেন। মানুষের রক্তে প্রায় ৪০০ এন্টিজেন রয়েছে। প্রায় ৩০ টির মত এন্টিজেন সম্পর্কে জানা গেছে। এসবের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ব্লাড গ্রুপকে ভাগ করা হয়েছে। এসব ব্লাড গ্রুপের মধ্যে রয়েছে A,B,AB এবং O। রক্তের গ্রুপের সাথে সবসময়ই অ্যান্টিজেনের মিল থাকে। যেমন A গ্রুপের রক্তের থাকবে A এন্টিজেন এবং B গ্রুপের রক্তে থাকবে B এন্টিজেন। কিন্তু অ্যান্টিবডি সবসময় আলাদা হবে অর্থাৎ অ্যান্টিবডি ব্লাড গ্রুপের বিপরীত থাকবে। যেমন A গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিবডি থাকবে b এবং B গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিবডি থাকবে a। এখন এডমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল কোন ব্লাড গ্রুপ কোন ব্লাড গ্রুপকে রক্ত দিতে পারবে। একটা উদাহরণ দিয়ে সেটি মনে রাখা যায় এবং সেটি খুবই সহজ কিন্ত মনে রাখতে হবে দাতার এন্টিজেন আর গ্রহীতার অ্যান্টিবডি যদি এক হয়ে যায় তাহলে রক্ত দিতে পারবে না। ধরি যে রক্ত দিবে সে হল A ব্লাড গ্রুপ এবং যাকে রক্ত দিবে সে হল B ব্লাড গ্রুপ। এখন A ব্লাড গ্রুপের এন্টিজেন হল A এবং B ব্লাড গ্রুপের অ্যান্টিবডি হল a। তাহলে এখানে দাতার এন্টিজেন আর গ্রহীতার এন্টিবডি মিলে যাওয়ায় রক্ত দিতে পারবে না। কারণ বিপরীত এন্টিবডি একে অপরের রক্তকে জমিয়ে দিবে।

[ কৌশলের মাধ্যমে চ্যাপ্টারটির এডমিশন রিভিউ সাবলীলভাবে বুঝানো হয়েছে ]

Rh ফ্যাক্টর ও তার জটিলতা

রক্তের Rh ফ্যাক্টর প্রথম আবিষ্কার করেন কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার এবং উইনার। রক্তে Rh ফ্যাক্টর উপস্থিত থাকলে তাকে Rh পজিটিভ রক্ত এবং Rh ফ্যাক্টর অনুপস্থিত থাকলে তাকে Rh নেগেটিভ রক্ত বলে। Rh ফ্যাক্টর মোট ছয়টি ফ্যাক্টরের সমষ্টি।

যদি Rh নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপকে Rh পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয় তাহলে Rh পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের এন্টিজেন এর প্রভাবে নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপে Rh ফ্যাক্টর এর বিরোধী এন্টিবডি উৎপন্ন হবে। ফলে দ্বিতীয়বার যদি সে ঐ Rh পজিটিভ রক্ত নেয় তাহলে গ্রহীতার শরীর থেকে Rh নেগেটিভ এন্টিবডি দাতার শরীরে গিয়ে দাতার লোহিত রক্তকণিকাকে জমাট বাঁধিয়ে ফেলে।

গর্ভ ধারণকৃত জটিলতা

যদি স্বামী এবং স্ত্রীর শরীরে Rh পজিটিভ এবং Rh নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের উপস্থিতি থাকে তাহলে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং তাদের প্রথম সন্তান হয় Rh পজিটিভ বিশিষ্ট। কারণ স্বামীর Rh পজিটিভ এর জিন প্রকট হয়। যখন এই সন্তান মায়ের গর্ভে থাকে তখন অমরার মাধ্যমে তার Rh পজিটিভ রক্ত মায়ের শরীরে সঞ্চালিত হয়। মায়ের শরীর Rh নেগেটিভ হওয়ায় Rh পজিটিভ বিরোধী এন্টিবডি তৈরি হওয়া শুরু করে। এই এন্টিবডি যখন অমরার মাধ্যমে সন্তানের শরীরে যায় তখন বিরোধী এন্টিবডি পেয়ে সন্তানের লোহিত রক্তকণিকাকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে গর্ভপাত ঘটে। যাকে বলা হয় এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস।

 [ কোষ বিভাজন চ্যাপ্টারটির সহজ এডমিশন রিভিউ ]

বিবর্তনবাদ

ডারউইনিজম বা প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ

ডারউইনিজমের প্রবর্তক হলেন ব্রিটিশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারউইন। এই মতবাদটি তিনি প্রকাশ করেন ১৮৫৯ সালে তাঁর বিখ্যাত বই "Origin of Species by Means of Natural Selection"( DU এডমিশন টেস্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ )।

তিনি মতবাদটি দেওয়ার পর তিনটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সেসব হল :

জীবন সংগ্রাম : প্রত্যেক প্রাণিকেই বেঁচে থাকার জন্য কষ্ট করতে হয়। এই কষ্টের পেছনে রয়েছে তার খাদ্যভাব এবং বাসস্থানের সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ তার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সবসময়ই একটা কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়।

যোগ্যতমের জয় : স্বাভাবিকভাবে এই বাঁচা মরার লড়াইয়ের মধ্যে যার জয় হবে সেই টিকে থাকবে এবং পরিবেশের উপর কতৃত্ব লাভ করবে।

বিবর্তনের স্বপক্ষে বিবর্তনবাদীরা প্রমাণ হিসেবে যা তুলে ধরে তা হল :-

# অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ

অঙ্গসঃস্থানিক‌ প্রমাণ হিসেবে বিবর্তনবাদীরা যা উল্লেখ করে - 

মাছের হৃৎপিণ্ড দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, উভচরে তিন প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, সরীসৃপে আংশিক চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট এবং পাখি ও স্তন্যপায়ীতে সম্পূর্ণ চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড বিদ্যমান। মানুষের একশটি লুপ্তপ্রায় উপাঙ্গ আছে বলে বিবর্তনবাদীরা দাবি করে থাকে। তার মধ্যে এপেন্ডিক্স,থাইমাস গ্রন্থি, পিনিয়াল গ্রন্থি এবং আক্কেল দাত উল্লেখযোগ্য।

[ প্রাণির পরিচিতি চ্যাপ্টারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এডমিশন রিভিউ ]

# জীবাশ্মঘটিত বা ভূতত্ত্বীয় প্রমাণ

জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবাশ্ম নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বলা হয় প্যালিওন্টোলজি। আধুনিক সভ্যতা ও মানুষের উদ্ভব পঁচিশ হাজার বছর পূর্বে ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। প্রায় তের কোটি বছর পূর্বে ডাইনোসরের প্রাধান্য ও বিলুপ্তি ঘটেছে বলে মনে করা হয়। সেই যুগকে বলা হয় ক্রিটেসিয়াস যুগ। জুরাসিক কলে দাতযুক্ত প্রথম পাখি দেখা যায় এবং এটি প্রায় সাড়ে ষোলো কোটি বছর পূর্বে। ট্রায়াসিক কলে ডাইনোসরের উদ্ভব ঘটেছে মনে করা হয়

# শারীরবৃত্তীয় ও জীবরসায়ন ঘটিত প্রমাণ

# ভ্রুণতত্ত্বীয় প্রমাণ

# শ্রেণিবিন্যাস নির্দেশিত প্রমাণ ইত্যাদি।

গুরুত্বপর্ণ দুইটি পয়েন্ট

টেস্ট ক্রস : এফ-১ বা এফ-২ জনুর বংশধরগুলো হোমোজাইগাস কিংবা হেটারোজাইগাস কিনা তা জানার জন্য মাতৃবংশের প্রচ্ছন্ন এলিল বিশিষ্ট জিনের সাথে ক্রস ঘটানো‌ হয় অর্থাৎ ‌পরীক্ষা করার জন্য তা ঘটানো হয়। এটিকে বলে টেস্ট ক্রস।

ব্যাক ক্রস : এফ-১ জনুর হেটারোজাইগাস জীবের সাথে পিতৃ অথবা মাতৃবংশীয় একটি জীবের সংকরায়ন হল ব্যাক ক্রস।

বিবর্তনের আরেকটি মতবাদ : ল্যামার্কিজম

বিজ্ঞানী ল্যামার্ক কতগুলো তার ভাবান্তরিত মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। যেমন জীবের পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার প্রয়োজনে তার শরীরে অঙ্গের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সেই অভাবের প্রেক্ষিতেই কোন জীবের নতুন অঙ্গের সূচনা ঘটে। আবার কোন অঙ্গের ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে সেই অঙ্গের বিলুপ্তি ঘটে। তিনি এইরকম একটা মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে এটি খুবই ঠুনকো যুক্তি। যেমন এখানে জিরাফের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। জিরাফের পূর্বপুরুষদের গ্রীবা ও সামনের পা ছোট ছিল। একসময় পৃথিবীতে চারণভূমির অভাব দেখা দিলে জিরাফ গাছের ডালপালা খাওয়ার প্রবণতা অনুভব করে। সেই ইচ্ছা থেকেই জিরাফের গলা লম্বা হয়েছে বলে বিবর্তনবাদীরা মনে করেন। আবার এখানে উটপাখির উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে উটপাখির পূর্বসূরীরা উড়তে পারত। কিন্তু উটপাখির ধীরে ধীরে উড়ার অনিচ্ছা থেকেই একসময় তাদের ডানার বিলুপ্তি ঘটে। এটি বিজ্ঞানমহলে গৃহীত হয় নি। কারণ মানুষের উড়ার ইচ্ছা অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তাই বলে মানুষের পিঠে কখনো পাখা গজায় নি। আবার ল্যামার্ক বিশ্বাস করতেন ‌কোন একটি অঙ্গের ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে সেই অঙ্গটি আকৃতিতে প্রশস্ত হয়। মানুষের শিরা ও ধমনী ক্রমাগতই ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু তাই বলে এগুলো বড় হয়নি। এ সমস্ত কারণে মতবাদটি মতবাদই রয়ে গেছে কখনো প্রতিষ্ঠিত সত্য হয়নি।         

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url