জীবপ্রযুক্তি HSC উদ্ভিদবিজ্ঞান একাদশ অধ্যায়।

একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির উদ্ভিদবিজ্ঞানের একাদশ অধ্যায় জীবপ্রযুক্তি যথাক্রমে মেডিকেল এডমিশন এবং ইউনিভার্সিটি এডমিশনের জন্য আবশ্যম্ভাবী গুরুত্ববহ একটি অধ্যায়। প্রতিবছরই এই অধ্যায়টি থেকে বিভিন্ন এডমিশন পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক MCQ প্রশ্ন আসে। কারণ জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রায়োগিক এবং চাহিদাপূর্ণ প্রয়োগ হলো জীবপ্রযুক্তি । 

জীবপ্রযুক্তি HSC উদ্ভিদবিজ্ঞান


তাই জীবপ্রযুক্তির উপর এই টিউটোরিয়ালে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিয়ে এডমিশন টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রেড কালার দিয়ে হাইলাইট করে দেওয়া হয়েছে। রেড কালার দিয়ে হাইলাইট করা লাইনগুলো বিগত বছরে কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে এসেছে। আর একটু কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অর্থাৎ আসার সম্ভাবনা আছে এ সমস্ত পয়েন্টগুলো ব্লু কালার দিয়ে হাইলাইট করা হয়েছে। তোমরা মনোযোগ দিয়ে পড়লে আশা করা যায় এখান থেকে 90% কমন পড়বে।

বায়োটেকনোলজি শব্দটি প্রথম ব্যাবহার করেছিলেন হাঙ্গেরীয় কৃষি প্রকৌশলী কার্ল এরেকি

বায়োটেকনোলজির জলীয় ও সামুদ্রিক প্রয়োগ হলো ব্লু বায়োটেকনোলজিকৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ গ্রিন বায়োটেকনোলজি এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ হলো রেড ও হোয়াইট বায়োটেকনোলজি।

বায়োটেকনোলজির চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ :-

  • জটিল রোগের প্রতিষেধক এবং অ্যান্টিবডি উৎপাদনে।
  • ইনসুলিনইন্টারফেরন হরমোন উৎপাদন করা হয় (ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে)
  • বায়োফার্মের মাধ্যমে হরমোন, অ্যান্টিজেনভিটামিন তৈরি করা হয়।

Topic 1 : উদ্ভিদ টিস্যু কালচার

'প্রতিটি সজীব উদ্ভিদ কোষেরই একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা আছে যাকে টটিপোটেন্সি বলা হয় ' - এই মতটি প্রকাশ করেন বিজ্ঞানী Morgan

টিস্যু কালচারের জন্য মাতৃউদ্ভিদ থেকে পৃথকীকৃত অংশকে বলা হয় এক্সপ্লান্ট। টিস্যু কালচারের জনক হ্যাবারল্যান্ড। টিস্যু কালচারের আরেক নাম In-vitro কালচার। টিস্যু কালচারের জন্য জীবাণুমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপকরণ গরমবায়ু ওভেনে ১৬০° সেলসিয়াস থেকে ১৮০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নির্বীজ করা হয়। অথবা ৯৫% অ্যালকোহলে ডুবিয়ে রেখে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

টিস্যু কালচারের বিভিন্ন প্রকারভেদের মধ্যে পরাগধানী কালচার করা হয় হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ উৎপাদনে, দৈহিক কোষ থেকে ভ্রূণ উৎপাদনকে বলা হয় সোমাটিক এমব্রায়োজেনেসিস, মেরিস্টেম কালচার করা হয় জীবাণুমুক্ত চারা উৎপাদনে। কারণ মেরিস্টেম টিস্যুতে কোন রোগজীবাণু থাকে না। টিস্যু কালচারের ক্ষেত্রে কালচার মিডিয়ামের pH ৫.৫-৫.৮ এর মধ্যে রাখা হয়। জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে মিডিয়ামকে ১২১°C তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হয়।

সংকর উদ্ভিদ উৎপাদনে সাইটোপ্লাজমের মিলনকে বলা হয় সোমাটিক হাইব্রিড। তবে শুধু সাইটোপ্লাজমের মিলনে সৃষ্ট উদ্ভিদকে হাইব্রিড না বলে বলা হয় সাইব্রিড। যেমন , আলু ও টমেটো উদ্ভিদের প্রোটোপ্লাস্ট ফিউশনে সৃষ্ট নতুন উদ্ভিদের নাম দেওয়া হয়েছে পোম্যাটো

Topic - 2 : জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে উৎপাদিত উদ্ভিদ বা প্রাণিকে বলা হয় ট্রান্সজেনিকস। সর্বপ্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি ব্যবহার করেন সায়েন্স ফিকশন লেখক Jack Williamson তাঁর পুস্তক Dragon's Island-এ।

ব্যাকটেরিয়ার দেহে মূল DNA ছাড়াও অতিরিক্ত যে বৃত্তাকার দ্বিসূত্রক DNA থাকে তা প্লাসমিড। Laderberg সর্বপ্রথম প্লাসমিডের সন্ধান পান E. coli ব্যাকটেরিয়াতে। প্লাসমিডের সংখ্যা কোষপ্রতি ১-১০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

প্লাসমিডের বৈশিষ্ট্য (7* Important)

  • বৃত্তাকার দ্বি-সূত্রক DNA অণু
  • এর আণবিক ভর 106 - 200 ×106  ডাল্টন
  • প্লাসমিডের নির্দিষ্ট স্থান কাটার এনজাইম হলো রেস্ট্রিকশন এনজাইম।
  • প্লাসমিড এক ব্যাকটেরিয়া থেকে অন্য ব্যাকটেরিয়ায় সঞ্চালিত হয় কনজুগেশনের মাধ্যমে

প্লাসমিডের প্রকার

  1. ব্যাকটেরিয়া দেহে Pili তৈরি করে F ও F` প্লাসমিড।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষমতাসম্পন্ন জিন থাকে R-প্লাসমিডে
  3. কোলিসিনভিব্রিওসিন উৎপাদনকারী জিন থাকে কোল প্লাসমিডে। কোলিসিন E.coli কোষকে ধ্বংস করে এবং ভিব্রিওসিন Vibrio cholerae কোষকে ধ্বংস করে।

রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির ধাপসমূহ

  1. এর প্রথম ধাপ কাঙ্খিত DNA নির্বাচন ও পৃথকীকরণ। এই ধাপে রেস্ট্রিকশন এন্ডোনিউক্লিয়েজ এনজাইমের দিয়ে DNA এর সুনির্দিষ্ট সিকোয়েন্স কেটে ফেলা হয়। প্রতিটি ব্যাকটেরিয়াম কোষ কমপক্ষে একটি রেস্ট্রিকশন এনজাইম উৎপন্ন করে। রেস্ট্রিকশন এনজাইমকে বলা হয় আণবিক কাচি বা বায়োলজিক্যাল নাইফ
  2. বাহক নির্বাচন
  3. কাঙ্খিত DNA কে নির্দিষ্ট স্থানে ছেদন
  4. ছেদনকৃত DNA খন্ডকে বাহক প্লাসমিড DNA-তে স্থাপন
  5. রিকম্বিনেন্ট DNA কে পোষক ব্যাকটেরিয়ামে প্রবেশ করানো। এটি করা হয় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ করে Heat shock এর মাধ্যমে। তবে পোষক কোষে DNA প্রবেশ করানোর আধুনিক পদ্ধতি হলো Electroporation

রিকম্বিনেন্ট DNA শনাক্তকরনের পদ্ধতি তিনটি (7* important)

  1. PCR পদ্ধতি
  2. Restriction Digestion দ্বারা
  3. জেনেটিক প্রোব এর মাধ্যমে
ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ তৈরি করা হয় Implanta পদ্ধতির মাধ্যমে।

কতগুলো রেস্ট্রিকশন এনজাইমের নাম :

  • Bam HI
  • Hind III
  • Eco RI                ( পুরো তালিকাটাই গুরুত্বপূর্ণ )
  • Hpa II
  • Mbo I

Topic 3 : জিন ক্লোনিং

জিন ক্লোনিং হলো কাঙ্খিত জিনকে হুবহু কপি করা।

PCR বা পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন

এটি DNA ক্লোনিং এর দ্রুততম পদ্ধতি। প্রথমে দ্বি-সূত্রক DNA কে ৯০°C তাপমাত্রায় একক সূত্রক করা হয়। বিভিন্ন প্রকার ক্লোনিং এর মধ্যে আছে DNA ক্লোনিং, রিপ্রোডাকটিভ ক্লোনিং ইত্যাদি। ডলি নামক ভেড়া সৃষ্টি করা হয়েছে রিপ্রোডাকটিভ ক্লোনিং এর মাধ্যমে।

জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার

  • লবণাক্ততা সহিষ্ণু পীনাট উদ্ভাবন করা হয়েছে জীবপ্রযুক্তি ব্যবহারে।
  • ট্রান্সজেনিক তুলা গাছ তৈরি করা হয়েছে Bacillus thuringiensis ব্যাকটেরিয়া থেকে একটি জিন সংযুক্তির মাধ্যমে।
  • রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে সূর্যমুখীর সালফার অ্যামিনো অ্যাসিড সৃষ্টিকারী জিন Agrobacterium tumfaciens ব্যাকটেরিয়ার প্লাসমিড DNA-এর মাধ্যমে ক্লোভার ঘাসে স্থানান্তর করা হয়েছে।
  • সুপার রাইস বা গোল্ডেন রাইসে রয়েছে ভিটামিন -A
  • জোনাকি পোকার দেহে আলোক বিচ্ছুরণ ঘটার কারণ লুসিফেরিন এনজাইম।
  • SIT বা Sterile Insect Technique হলো পরিবেশবান্ধব ক্ষতিকারক পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।

Topic 4 : বাংলাদেশের Genetically Modified ফসল 

সয়েল ব্যাকটেরিয়া Bacillus thuringiensis থেকে ক্রিস্টাল প্রোটিন জিন (Cry1Ac) বেগুনের জিনোমে অন্তর্ভুক্ত করে উৎপন্ন বেগুন হলো Bt-বেগুন। মানবদেহের প্রতিটি কোষ ২৫০০০ পর্যন্ত কর্মক্ষম জিন বহন করে। মানুষের জেনেটিক ডিসঅর্ডার জানা গেছে ৩৫০০ টি। 

ইনসুলিন

মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই হরমোনটি অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স এর বিটা কোষ থেকে ক্ষরিত হয়। এর কাজ রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ লেভেলকে কমানো। ইনসুলিন এক প্রকার সরল প্রোটিন যা ৫১ টি অ্যামিনো এসিড নিয়ে গঠিত। ইনসুলিন এর আণবিক ভর ৫৭৩৪। মানবকোষে ইনসুলিন উৎপাদনকারী জিন থাকে কোষের ১১ নং ক্রোমোসোমের খাটো বাহুর শীর্ষে। ১৯৮২ সালে ইনসুলিনের প্রথম বাজারজাতকরণ হয় হিউমুলিন নামে।

ইন্টারফেরন

ইন্টারফেরন হলো অতি উচ্চ আণবিক ওজনসম্পন্ন প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রোধ করে। ইন্টারফেরন আবিষ্কার করেন Alick Isaacs এবং Jean Lindermann। ইন্টারফেরনের বাণিজ্যিক নাম বিটাফেরন

টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর বা TPA

স্ট্রেপটোকাইনেজ এনজাইম জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে দেয়। মানুষের রক্তে প্লাজমিন এনজাইম প্লাজমিনোজেন অবস্থায় বিরাজ করে। প্লাজমিনোজেনকে সক্রিয় করতে প্রয়োজন হয় TPA।

কিডনি এরিথ্রোপয়েটিন নামক হরমোন তৈরি করে যা bone marrow-তে প্রবেশ করে। ফলে লোহিত কণিকা উৎপন্ন হয়।


সমুদ্র থেকে তেল অপসারণে Pseudomonas , Nocardia , Mycobacteria ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সিউয়েজ আত্তীকরণে ব্যবহার করা হয় Zooglea ramigeraPDH 45 লবণাক্ততা সহিষ্ণু জিন।

Topic 5 : জিনোম সিকোয়েন্সিং

মানুষের দেহে এক জোড়া জিনোম আছে। একটি নিউক্লিয়াসে ক্রোমোসোমের একটি সেটকে বলা হয় জিনোম। জিনোম হলো জীবের মাস্টার ব্লুপ্রিন্ট। পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করেন বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম এবং পাটের বেস পেয়ার ১২০ কোটি।
জীবপ্রযুক্তি অধ্যায়টির সারসংক্ষেপ এই পর্যন্তই। অন্তত এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায় এর বাইরে আর তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই চ্যাপ্টারটিতে নেই। পড়ে আপনার উপকার হলো কিনা তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

আপনি যদি MCQ প্র্যাকটিস করতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন জীবপ্রযুক্তি MCQ প্র্যাকটিস

এটা MCQ প্র্যাকটিসের আরেকটি সেরা ওয়েবসাইট লিংক

আরও বিভিন্ন অধ্যায়ের এডমিশন নোট -


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url