বর্জ্য ও নিষ্কাশন MCQ এর জন্য সম্পূর্ণ নোট

বর্জ্য ও নিষ্কাশন চ্যাপ্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল এডমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশনের জন্য। প্রত্যেক বছর মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় এখান থেকে প্রায় তিন থেকে চারটি প্রশ্ন থাকে। তবে এখানে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো আলোচনা করা হয়েছে। বর্জ্য ও নিষ্কাশন MCQ এর জন্য রেড মার্ক দিয়ে কালার করে দেওয়া শব্দগুলো দ্বারা বুঝানো হয়েছে এসব শব্দগুলোর জন্যই ঐ লাইনটি গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের অনেক বড় চ্যাপ্টারকে সংক্ষিপ্তাকারে বিভিন্ন মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন টেস্টে প্রশ্ন হয়েছে এমন টপিকগুলো বাছাই করে রেড মার্ক দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। কোন অংশই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

রেচন বর্জ্যের প্রকারভেদ

মানবদেহে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থগুলো --

  • অ্যামোনিয়া
  • ইউরিয়া 
  • ইউরিক এসিড
  • প্রোটিন
  • নিউক্লিক এসিড

ইউরিওটেলিক প্রাণি হলো যারা ইউরিয়াকে রেচন পদার্থরূপে ত্যাগ করে। উদাহরণ - মানুষ

ইউরিকোটেলিক প্রাণি বলা হয় যারা ইউরিক এসিডকে প্রধান বর্জ্য পদার্থরূপে ত্যাগ করে। উদাহরণ - পতঙ্গ, সাপ, টিকটিকি, পাখি

অ্যামোনোটেলিক হলো যারা অ্যামোনিয়াকে রেচন বর্জ্যরূপে ত্যাগ করে। উদাহরণ - হাইড্রা, কেচো

মানুষের রেচনতন্ত্রের গঠন

মানুষের রেচনতন্ত্র গঠিত হয় দুটি বৃক্ক‌ বা কিডনি, কিডনির সাথে সংযুক্ত দুটি ইউরেটার যা কিডনি থেকে মূত্র পরিবহন করে নিয়ে যায় মূত্রথলিতে নিয়ে যায়, একটি মূত্রথলি এবং একটি মূত্রনালি। মানুষের প্রধান রেচন অঙ্গ বৃক্ক এবং সহকারি রেচন অঙ্গগুলো যথাক্রমে ত্বক, ফুসফুস, যকৃত, পৌষ্টিকনালি

রেচনতন্ত্রের গঠন
রেচনতন্ত্র
বৃক্কের অবস্থান মেরুদন্ডের দ্বাদশ থোরাসিক কশেরুকার নিচে এবং তৃতীয় লাম্বার কশেরুকার উপরে অবস্থিত। বৃক্কেল আকৃতি শীমবীজের মতো।
  • রেচননালি বা ইউরেটারের দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার।
  • ডেট্রুসর নামক অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে মূত্রথলি গঠিত। মূত্রথলির মূত্রধারণ ক্ষমতা ৭০০ - ৭৫০ মিলিমিটার। তবে ২৮০ - ৩২০ মিলিমিটার মূত্র জমা হলেই ত্যাগের ইচ্ছা জাগে।

বৃক্ক‌ বা কিডনির গঠন

কিডনি কালচে লাল রংয়ের। এর দৈর্ঘ্য ১০ - ১২ সেন্টিমিটার। পুরুষদেহে কিডনির ওজন ১৫০ - ১৭০ গ্রাম এবং নারীদেহে ওজন ১৩০ - ১৫০ গ্রাম। কিডনির অবতল অংশ বা ভিতরের অংশের ভাঁজ হলো হাইলাম। হাইলামের মধ্য দিয়েই ইউরেটাররেনাল শিরা বাইরে বেরিয়ে যায় এবং রেনাল ধমনিশিরা বৃক্কে প্রবেশ করে। বৃক্কের আবরণকে বলা হয় ক্যাপসুল [ তন্তুময় যোজক টিস্যু ]।

কিডনির গঠন
কিডনির ভেতরকার বিভিন্ন অংশ
• বৃক্কে রেনাল পিরামিডের সংখ্যা ৮ - ১৮ টি যাদের অবস্থান কর্টেক্স অঞ্চলে।
• বৃক্কে রেনাল প্যাপিলা থাকে ১০ - ২৫ টি যারা পেলভিসে উন্মুক্ত।
• বৃক্কে মেজর ক্যালিক্সের সংখ্যা ২ - ৩ টি এবং মাইনর ক্যালিক্স ৮ - ১৪ টি। এগুলো হলো পেলভিসের শাখা প্রশাখা।

বৃক্কের কাজ

  • দেহ থেকে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য অপসারণ করে।
  • দেহে পানি সমতা রক্ষা করে যার অপর নাম অসমোরেগুলেশন
  • pH নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহের অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম লবণের সাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • এরিথ্রোপয়েটিন, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনঅ্যানজিওটেনসিন এই তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন বৃক্ক ক্ষরণ করে। এরিথ্রোপয়েটিন লোহিত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।
  • বৃক্ক রেনিন নামক বিশেষ এনজাইম ক্ষরণ করে।
  • গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় অনাহারের সময় বৃক্ক‌ প্রায় ২০% গ্লুকোজ সরবরাহ করে।

নেফ্রন (কিডনির গাঠনিক একক)

বৃক্কের সূক্ষ্ম এবং গাঠনিক একক নেফ্রন। কারণ বৃক্কের মূল কাজ রক্ত থেকে বর্জ্য সংগ্রহ হয় নেফ্রনের মাধ্যমে। প্রতিটি বৃক্কে ১০ - ১২ লক্ষ নেফ্রন আছে। প্রতিটি নেফ্রন ৩ - ৫ সে.মি লম্বা। এভাবে প্রত্যেক নেফ্রনকে যদি সংযুক্ত করা হয় তাহলে ৩৬ কিলোমিটার পথের চেয়েও লম্বা হবে।

বৃক্ক প্রতি মিনিটে রক্ত থেকে ১২৫ ঘনসে.মি তরল শোষণ করে। তার মধ্য থেকে ৯৯% পানি আবার রক্তে ফিরে যায়। অর্থাৎ বৃক্ক‌ প্রতি মিনিটে ১ ঘনসে.মি মূত্র উৎপাদন করে।

নেফ্রনের গঠন
একটি নেফ্রনের সম্পূর্ণ গঠন
প্রথম বৃক্কের সূক্ষ্ম গঠন তথা নেফ্রনের সঠিক বর্ণনা করেন স্যার উইলিয়াম বোমেন। প্রত্যেক নেফ্রনের দুটি অংশ - রেনাল করপাসল ও রেনাল টিউবিউল।

রেনাল করপাসল

নেফ্রনের রেনাল করপাসলের অবস্থান বৃক্কের কর্টেক্সেগ্লোমেরুলাসবোম্যান্স ক্যাপসুল নিয়ে গঠিত রেনাল করপাসল।

বোম্যানস ক্যাপসুল আইশাকার এপিথেলিয়ামে গঠিত এবং দ্বিস্তরী পেয়ালার মতো।

বোম্যানস ক্যাপসুলের গ্লোমেরুলাস সংলগ্ন ভিসেরাল স্তরটি বিশেষ প্রবর্ধনযুক্ত কোষ পোডোসাইটে গঠিত।

রেনাল করপাসল
রেনাল করপাসলের গঠন 
গ্লোমেরুলাস গঠিত হয় অ্যাফারেন্ট আর্টারিওল ধমনি থেকে বিভক্ত হওয়া ৫০ - ৬০ টি কৈশিকজালিকার সমন্বয়ে।

গ্লোমেরুলাসে সর্বদা উচ্চ রক্তচাপ বজায় থাকার কারন অ্যাফারেন্ট আর্টারিওলের চেয়ে ইফারেন্ট আর্টারিওলের ব্যাস কম হওয়া।

গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেট জমা হয় বোম্যানস ক্যাপসুলে।

রেনাল টিউবিউলস

রেনাল টিউবিউল লম্বায় ৩ সেন্টিমিটার এবং তিনটি অংশে বিভক্ত। অংশ তিনটি হলো -
  • প্রক্সিমাল প্যাচানো নালিকা
  • হ্যানলির লুপ
  • ডিস্টাল প্যাচানো নালিকা
প্রক্সিমাল প্যাচানো নালিকা ১৪ মিলিমিটার লম্বা এবং এটি বৃক্কের কর্টেক্সে অবস্থিত। প্রক্সিমাল প্যাচানো নালিকার প্রাচীর একস্তরী এপিথেলিয়াল কোষে গঠিত এবং এখানে মাইক্রোভিলাই থাকে যা মিলিতভাবে ব্রাশ বর্ডার গঠন করে।

হেনলির লুপ একটি U আকৃতির ফাঁস বা লুপ যা বৃক্কের কর্টেক্স এবং মেডুলা দুই অঞ্চলেই বিস্তৃত থাকে। হেনলির লুপের নিম্নগামী নালিকে অবরোহী বা অ্যাসেন্ডিং বাহু এবং উর্ধ্বগামী নালিকে বলা হয় আরোহী বা অ্যাসেন্ডিং বাহু।

ডিস্টাল প্যাচানো নালিকা ৫ মিলিমিটার লম্বা এবং এর অবস্থান বৃক্কের কর্টেক্সে। কিউবয়ডাল বা একস্তরী এপিথেলিয়াল কোষে ডিস্টাল প্যাচানো নালিকার প্রাচীর গঠিত।

নেফ্রনের প্রক্সিমাল ও ডিস্টাল প্যাচানো নালিকা পেরিটিউবিউলার রক্তজালিকা দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে যাদের কাজ হলো নেফ্রন থেকে বিভিন্ন বস্তুর পুনঃশোষণ। 

নেফ্রনের প্রক্সিমাল পেচানো নালিকায় ঘটে নির্বাচনমুলক পুনঃশোষণ, হেনলির লুপ থেকে পুনঃশোষিত হয় পানি এবং ডিস্টাল প্যাচানো নালিকা থেকে পানি এবং অন্যান্য বস্তুর পুনঃশোষণ ঘটে।

রেনাল করপাসল আল্ট্রাফিল্ট্রেশন অঙ্গরুপে কাজ করে। রক্ত থেকে প্রতি মিনিটে ১২৫ মিলিলিটার রেচন বর্জ্য বোম্যানস ক্যাপসুলে গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেট হিসেবে জমা হয়।

নেফ্রনের সংগ্রাহী নালির সাথে যুক্ত থাকে ডিস্টাল প্যাচানো নালিকা।

কয়েকটি সংগ্রাহী নালির সমন্বয়ে গঠিত হয় ডাক্ট অব বেলিনি

নেফ্রন তিন প্রকারের -
  1. সুপারফিসিয়াল কর্টিক্যাল নেফ্রন
  2. মিড কর্টিক্যাল নেফ্রন
  3. জাক্সটা মেডুলারি নেফ্রন
মানবদেহে ৮৫% নেফ্রন সুপারফিসিয়াল কর্টিক্যাল নেফ্রন। ৫% মিড কর্টিক্যাল নেফ্রন। ১০% জাক্সটা মেডুলারি নেফ্রন।

রেচনের শারীরবৃত্ত

ইউরিয়া উৎপন্ন হয় যকৃতের অরনিথিন চক্রের মাধ্যমে। অরনিথিন চক্রে NH3CO2 মিলিত‌ হয়ে ইউরিয়া তৈরি করে।

  • মূত্র তৈরির প্রথম ধাপ রক্তের অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবণ। রক্তের অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবণ ঘটে রেনাল করপাসলে। মানবদেহে দুটি বৃক্কের মাধ্যমে ১২০০ মিলি রক্ত প্রবাহিত হয়। প্রবাহিত রক্ত থেকেই বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
  • গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেটের ৮০% নির্বাচিত পদার্থ শোষিত হয় রেনাল টিউবিউলস থেকে। রেনাল টিউবিউলসে মাইক্রোভিলাইব্যাসাল চ্যানেল থাকায় এর শোষণ তল বেশি। রেনাল টিউবিউলসের কোষের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া বেশি থাকে।
প্রক্সিমাল প্যাচানো নালিকা থেকে ৬০% পদার্থ পুনঃশোষিত হয়।

মূত্র

একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক গড়ে ১.৫ লিটার মূত্র ত্যাগ করে।

চা, কফি, অ্যালকোহল, লবণাক্ত পানি এবং পানি ডাইইউরেটিক পদার্থ যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়।

স্বাভাবিক মূত্র হালকা হলুদ বা খড় বর্ণের। মূত্রের রং হলুদ হওয়ার কারণ ইউরোক্রোম নামক রঞ্জকের উপস্থিতি।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মূত্রের পরিমাণ ৬০০ - ২৫০০ মিলিমিটার বা ০.৬ - ২.৫ লিটার।

মূত্রের স্বাভাবিক আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০০৮ - ১.০৩০

মূত্র হালকা অম্লধর্মী এবং গড় pH মান ৬.০

মূত্রে ইউরিনোডের উপস্তিতির কারণে গন্ধ হয়। ইউরিনোডের সংকেত C6H8O

মূত্রে স্বাভাবিকভাবে কোন গ্লুকোজ বা প্রোটিন পাওয়া যায় না। তবে রোগ হলে ভিন্ন কথা।

একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ৬ - ৮ বার মূত্র ত্যাগ করে।

মূত্রের অস্বাভাবিক কিছু উপাদান যা বিভিন্ন রোগ হলে নির্গত হয় -
  • ডায়াবেটিস মিলিটাস হলে মূত্রে গ্লুকোজ পাওয়া যায় যাকে গ্লুকোসোরিয়া বলা হয়।
  • লিউকেমিয়া, লিম্ফোসারকোমা, বৃক্কের প্রদাহ প্রভৃতি রোগে মূত্রে প্রোটিন পাওয়া যায় যাকে প্রোটিনিউরিয়া বলা হয়।
  • ডায়াবেটিসে মূত্রে কিটন বডি পাওয়া যায়, যার আরেক নাম কিটোনুরিয়া
  • জন্ডিস হলে মূত্রে বিলিরুবিন পাওয়া যায়।
  • মূত্রে রক্ত পাওয়া গেলে তাকে হিমাচুরিয়া বলা হয়।

রেচনে বৃক্কের ভূমিকা

ইউরিক এসিড সৃষ্টি হয় যকৃতে পিউরিন ক্ষারক বিপাকের ফলে।

ক্রিয়েটিনিনের সৃষ্টি ক্রিয়েটিন নামক অ্যামিনো এসিড থেকে যার অবস্থান পেশিতে। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের উপস্থিতিকে কিডনির রোগ নির্ণয়ের নির্দেশক ধরা হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষে ০.৬ - ১.২ mg/dl এবং মহিলাতে ০.৫ - ১.১ mg/dl।

অসমোরেগুলেশন হলো দেহের পানি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্লোরাইড আয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। অর্থাৎ কিডনি এর কোনটির পরিমাণকে খুব বেশি বাড়তে বা কমতে দেয় না।

অ্যান্টিডাইইউরেটিক বা ADH হরমোন দেহে পানির সমতা রক্ষা করে এবং ADH এর আরেক নাম ভ্যাসোপ্রেসিন। ADH ক্ষরিত হয় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে।

হাইপোথ্যালামাসে উপস্থিত অসমোরিসেপ্টর স্নায়ুকোষ দেহ তরলের অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

কিডনি বিকলের লক্ষণ ও প্রতিকার

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃক্ক বা কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং বলা হয়ে থাকে ৭০ বছর বয়স্ক মানুষের কিডনি শুধু ৫০% কাজে সক্ষম থাকে।

একনাগাড়ে কিডনির কার্যকারিতা ৩ মাসের অধিক সময় ধরে লোপ পেলে তা হলো ক্রনিক রেনাল ফেইল্যুর বা দীর্ঘস্থায়ী বৈকল্য। ক্রনিক রেনাল ফেইল্যুরের ক্ষেত্রে কিডনির কার্যকারিতা ৭০ - ৭৫% লোপ পায়। ডায়ালাইসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপন ক্রনিক রেনাল ফেইলুরের একমাত্র চিকিৎসা।

মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কিডনি যখন তার স্বাভাবিক কার্যকলাপ যেমন দেহ থেকে বর্জ্য অপসারণ, দেহে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অক্ষম হয়ে পড়ে তাকে বলা হয় কিডনির তাৎক্ষনিক বৈকল্য বা একিউট রেনাল ফেইল্যুর। একিউট রেনাল ফেইল্যুরের ক্ষেত্রে দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় যা হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

৭০% কিডনি বিকলের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। কিডনি বিকলের মূল লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অতি ঘন অল্প মূত্রত্যাগ, পায়ের পাতা, গোড়ালি ইত্যাদি ফুলে যাওয়া এবং ফুসফুসে পানি জমা।

বৃক্ক বিকল হয়েছে কিনা তা চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি, IVU, রেনোগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে।

বৃক্ক নিসৃত হরমোন এরিথ্রোপয়েটিন এবং ক্যালসিট্রাওল রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে।

বৃক্ক বা কিডনি বিকল হওয়ার তাৎক্ষণিক লক্ষ্মণ -
  • রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাবে
  • লোহিত রক্তকণিকা কমে যাবে যাকে অ্যানিমিয়া বলা হয়।

ডায়ালাইসিস

কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ না করলে রক্তে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও পটাশিয়াম বেড়ে যায়। এসব বর্জ্যকে কৃত্রিমভাবে অপসারণ করার প্রক্রিয়ায় ডায়ালাইসিস। রক্তে রেচন বর্জ্যের বৃদ্ধিকে বলে অ্যাজোটিমিয়া এবং এর ফলে অনুভূত অসুস্থতাকে বলা হয় ইউরেমিয়া।

ডায়ালাইসিস দুই প্রকার যথাক্রমে - হিমোডায়ালাইসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।

হিমোডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে একটি ফাঁপা নলাকার সূচ ব্যবহার করা হয় যার নাম ক্যাথেটার। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে দেহেই অবস্থিত পেরিটোনিয়াল ঝিল্লিকে ডায়ালাইসিং ঝিল্লি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

কিডনি প্রতিস্থাপন

কারো কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে অন্য কারো সুস্থ মানুষের কিডনি দিয়ে সেই বিকল কিডনির প্রতিস্হাপন হল বৃক্ক বা কিডনি প্রতিস্থাপন। কিডনি রোগের ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস একটি সাময়িক সমাধান কিন্তু স্থায়ী সমাধান হলো কিডনি প্রতিস্থাপন।
  • কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কোন সুস্থ মানুষ থেকে কিডনি নেওয়ার পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সেটি অসুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
  • দাতা এবং গ্রহীতার কিডনির টিস্যু ম্যাচ করতে হবে।
আশা করি বর্জ্য ও নিষ্কাশন চ্যাপ্টারটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অংশই বাদ যায় নি। তারপরেও কোন কিছু মিসিং মনে হলে তোমরা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাও।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url