হার্ট এটাক কি? হার্ট এটাকের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

হার্ট এটাক বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ইমার্জেন্সী রোগগুলোর মধ্যে একটি। সারা বিশ্বের জন্য একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে হার্ট এটাক। কিশোর থেকে প্রবীণ কেউ বাদ যাচ্ছে না মহামারীর রূপ ধারণ করা এই হার্ট এটাক থেকে। আপনারা যারা হার্ট এটাকে ভুগছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি খুবই উপকারী হবে। 

তবে হার্ট এটাকের প্রতিকারের আগে এটির কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে প্রথমে। আর্টিকেলটি খুবই দীর্ঘ হবে। তবে ধৈর্য নিয়ে পড়তে পারলে আপনার উপকারে আসবে।

হার্ট এটাক

হার্ট এটাক কি ?

হার্ট এ্যাটাক হলো হৃৎযন্ত্রে কম রক্তপ্রবাহের জন্য সৃষ্ট একটি জরুরী বিপদসঙ্কুল অবস্থা যার কারণে রোগীর প্রাণনাশ ঘটে যেতে বেশি সময় লাগে না। রক্তপ্রবাহের জন্য হার্টের যে রক্তনালী বা ধমনী গুলো রয়েছে সে ধমনিগুলো যখন ব্লক হয়ে যায় এবং রক্তপ্রবাহ করতে পারে না তখন তাকে বলা হয় হার্ট এটাক। রক্ত না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হৃৎ পেশিগুলো আর জীবিত থাকে না। 

যদি প্রয়োজনীয় রক্ত তৎক্ষণাৎ জমা হতে না পারে তাহলে পার্মানেন্টলি হার্ট ডেমেজ হয়ে যায়। যদি আপনি নিজে বা আপনার পরিচিত কেউ হার্ট অ্যাটাকে ভুগছে তাহলে মনে রাখবেন সময় খুব সংক্ষিপ্ত, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্লিনিকের শরণাপন্ন হোন। কারণ কয়েক মিনিট বা কয়েক সেকেন্ডের দেরি আপনার জীবনের বিপর্যয়ের জন্য যথেষ্ট হবে।

হার্ট এটাকের সময়কার অবস্থা

যখন একজনের হার্ট এটাক হয়েছে বলে ধরা হয়, এর অর্থ তার হার্টের কোন একটি অংশে রক্ত প্রবাহ হচ্ছে না বা কিঞ্চিৎ রক্ত প্রবাহ হচ্ছে। যার ফলাফল হিসেবে হার্টের ঐ অংশটি মৃতপ্রায়। আমাদের শরীরে যে অংশটির কারণে রক্ত প্রবাহ হয় তা হল হার্ট। 

এই একটি অংশের জন্যই হার্টের পুরো রক্ত প্রবাহের সিকুয়েন্সে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে এবং ঐ নির্দিষ্ট অংশটিই আপনার পুরো শরীরের রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে যদি অবস্থার উন্নতি না হয়। 

হার্ট এটাক প্রতিরোধে বিখ্যাত বাংলাদেশী চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ

প্রকৃত অর্থে অধিকাংশ রোগের মূল কারণ হলো কোষ। আপনার অসুখ হয়েছে তার অর্থ হলো আপনার দেহকোষ সঠিকভাবে ফাংশন করছে না। সেখানে অনেক ময়লা আবর্জনা জমে আছে। আমাদের দেহ বিলিয়ন বিলিয়ন কোষ দিয়ে গঠিত। আমাদের পুরো দেহটাই হলো কোষের সমষ্টি।

তাই আপনি যদি কোষের ময়লা আবর্জনা গুলো পরিষ্কার করতে পারেন তাহলে হার্ট এটাক, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি অনেক রোগ থেকেই আপনি শতভাগ মুক্ত। কারণ এসব রোগের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ঔষধ সেবন আপনাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে। আর কোষের মধ্যে জমে থাকা চর্বিসহ অন্যান্য আবর্জনাগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ঘাম ঝরানো ব্যায়াম।

হার্ট এটাক হয় হৃৎপিণ্ডে যে রক্তনালিগুলো রক্ত নিয়ে আসে সেখানে চর্বি জমে গেলে। এখন প্রশ্ন হলো চর্বিটা কিভাবে জমে ? এর উত্তর খুবই বিস্তারিত। আপনি যদি হার্ট এটাকের কারণে কখনো হাসপাতালে গিয়ে থাকেন তাহলে ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে আপনার হার্টের রক্তনালীতে একটু একটু করে চর্বি জমতে জমতে যখন ব্লকেড ৯৫% বা ১০০% এ পৌঁছে হার্ট এটাক হয়েছে তখনই আপনি বুঝেছেন। 

এর আগে কিন্তু বুঝতে পারেন নি। অর্থাৎ মরার আগ মুহূর্তে আপনি বুঝেছেন আপনার হার্ট এটাক হয়েছে। 

এনজিওগ্রাম করে দেখা গেল আপনার হার্টের মেইন তিনটা ভেসেলেই ব্লকেড। অর্থাৎ নালিতে চর্বি জমতে জমতে ব্লক হয়ে গিয়েছে, রক্ত আর যাওয়া আসা করার জায়গা নেই। এখন ডাক্তার আপনাকে বলল আপনাকে বাইপাস করতে হবে। 

অর্থাৎ পা থেকে একটা ভেইন কেটে নিয়ে হার্টের ভেসেলের যে জায়গায় ব্লকেড সেখানে লাগিয়ে দেওয়া [ওপেন হার্ট সার্জারি]। এখন আপনিই বলেন পরিণতিটা কি খুবই ভালো ? যে মানুষের একবার ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়েছে। 

সে নিশ্চয় আরেকবার হার্ট এটাক করবে এবং পরেরবার হার্ট এটাক করে হয়তো সে মারা যাবে। অর্থাৎ ঔষুধ, সার্জারি কখনোই একজন রোগীকে ভালো করতে পারে না। শুধু তার বেচে থাকার সময়কে একটু বাড়িয়ে দেয়। এখন সমস্যার গোড়ায় হাত দেওয়া দরকার আমাদের।

তাহলে হার্ট এটাক হয়েছে এটি আপনি শেষ সময়ে গিয়ে বুঝতে পারলেও এর প্রস্ততি শুরু হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে থেকেই। অর্থাৎ তখন থেকেই একটু একটু করে চর্বি জমতে শুরু করেছে। আর যখনই আপনাকে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় তখনই বুঝতে পারেন হার্ট এটাক হয়েছে আপনার।

তাহলে চর্বি ১% জমা শুরু হতেই আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শুরুটা হয় এভাবেই, প্রথমে আপনার রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। আরেকটি কারণ আপনার কার্ডিয়াক মাসলগুলো দূর্বল হয়ে যায়। অর্থাৎ মোটর দূর্বল, আর পানি উঠাইতে পারে না।

হার্ট ব্লকের আরেকটি মেজর কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এটা হয় আপনি ইচ্ছামতো খেয়েছেন কিন্তু এই খাবার থেকে জমা হওয়া চর্বিগুলো পরিশ্রম করে ঘামের মাধ্যমে বের করে দেননি। যার ফলে এই অতিরিক্ত ফ্যাট কোষে গিয়ে জমা হয়। কোষে ফ্যাট জমা হওয়ার কারণে কোষের নিজস্ব ধারণক্ষমতার বাইরের ফ্যাটগুলো রক্তনালিতে জমা হয়ে হার্ট এটাক ঘটায়। 

তাহলে আপনার হার্ট এটাকের মূল কারণ হলো চর্বি যা তেল জাতীয় খাবার থেকে আসে। আর তা আপনি ইচ্ছামতো খেয়েছেন। কিন্তু এর থেকে জমা হওয়া চর্বিগুলো বার্ন করেন নি বা ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করেন নি।

গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ কমে গেলেও হার্ট এটাক ঘটে। গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে। এটা সবচেয়ে বেশি ঘটে ডায়াবেটিস রোগীদের। গ্রোথ হরমোন বাড়ে ফাস্টিং অর্থাৎ উপবাস থাকলে। আবার যারা শুধু ভাত খায়, প্রোটিন কম খায় তাদের ক্ষেত্রেও গ্রোথ হরমোন কমে যায়।

হার্টের জন্য খুবই উপকারী হলো 'ভিটামিন ডি'। আর এই 'ভিটামিন ডি' তৈরি হয় রোদে গেলে অর্থাৎ রোদে হাটাহাটি করলে। রোদ যার মাধ্যমে 'ভিটামিন ডি' তৈরি করে তা হলো 'কোলেস্টেরল'। আর এই কোলেস্টেরল আসে প্রোটিন থেকে অর্থাৎ মাছ, মাংস আর ডিমের কুসুম থেকে। 

আপনি যদি মাছ, মাংস আর ডিমের কুসুম খেয়ে নিয়মিত ১ ঘন্টা ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করেন তাহলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত কোন জটিলতা আপনার মাঝে থাকবে না। বরং আপনি আরো সুপুরুষ হবেন। কারণ আপনার যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন কোলেস্টেরলের মাধ্যমেই বৃদ্ধি পায়। যার সার্টিফিকেট আপনি আপনার স্ত্রী থেকে পেয়ে যাবেন। 

তাই কোলেস্টেরল কখনোই আপনার ক্ষতি করে না। "কোলেস্টেরল ক্ষতিকর তখনই হয় যখন আপনি গায়ে রোদ না লাগান আর ঘাম ঝরানো ব্যায়াম না করেন"। কারণ কোলেস্টেরল না থাকলে তো আপনার পুরুষত্ব থাকবে না।

হার্ট ব্লকের আরেকটি অন্যতম সহায়ক বিপদ হলো স্ট্রেসিং বা দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তা কখনোই না করতে পারলে ভালো। কারণ স্বাভাবিকভাবেই এটি আপনার জীবনে কখনো সুফল বয়ে আনে না। দুশ্চিন্তা করে কেউ জীবনে কখনো সফল হয় নি। দুশ্চিন্তা আসে শয়তানের 😈 পক্ষ থেকে।

স্ট্রেসে থাকলে দেহ থেকে কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ হয়। কর্টিসল সুগার নিয়ে আসে। সুগার ইনসুলিন নিয়ে আসে। তার অর্থ দুশ্চিন্তা শরীরে সুগার বাড়ায়, ব্লাড প্রেসার বাড়ায়, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়। যার ফলশ্রুতিতে হার্ট ব্লক তৈরি হয়।

হার্ট এটাকের লক্ষণ হিসেবে যা দেখা যায়

হার্ট এটাকের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লক্ষণ রয়েছে তবে তা লিঙ্গভেদে ভিন্ন প্রকারের। পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে অনেকটা আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। রোগীদের ভাষ্যমতে কিছু কমন হার্ট এটাকের লক্ষণ হল -

  • বুকে ব্যাথা বা অ্যানজাইনা : এই লক্ষণটি হালকা থেকে শুরু হয়ে ভারির দিকে যেতে পারে। যেমন বুকে ব্যাথা কারো তীব্র অনুভব হতে পারে আবার কারো বা কম। তবে ব্যাথা প্রথমে বুক থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে সারা দেহে যেমন বাহু, চোয়াল, গলা এবং কোমরের উপরে বা নিচে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় সব রোগীদের এই লক্ষণ দেখা যায়। আসলে তারা হার্টে রক্তের কম প্রবাহের কারণে ঘটিত ফলাফলকেই ব্যাথা হিসেবে প্রকাশ করে।
  • শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয় বা ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে না।
  • বমি বমি ভাব থাকে, যাকে ক্লিনিকের ভাষায় নওসিয়া বলে। অনেক সময় হার্ট এটাক পেটের সমস্যা বা খাবার হজম না হওয়া থেকেও ঘটতে পারে।
  • বুক ধড়ফড় করা। রোগী অনেক সময় এই ধরনের অনুভূতিও প্রকাশ করে। নিজেকে অবসাদগ্রস্থ মনে হওয়া, মাথা ব্যাথা বা অনেক সময় রোগী মাথা ঘোরাচ্ছে বলেও অনুভূতি প্রকাশ করে।
  • অতিরিক্ত ঘামানো।
হার্ট এটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

মহিলাদের হার্ট এটাকের লক্ষণ

সাম্প্রতিক সময়ের মেডিকেল রিসার্চ অনুযায়ী মহিলাদের হার্ট এটাকে এর চেয়েও বেশি লক্ষণ দেখা যায়। যেমন বুকে ব্যাথা, বিশেষ করে বুকের মাঝখানে ব্যাথা করে। অস্বস্তি অনুভব হয় বিশেষ করে বদহজম ঘটে। শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, অবসাদ এবং বিশেষ করে হার্ট এটাকের আগে অনিদ্রায় ভোগে। পেট, বাহু, গলা, কাধ এবং পেছনে ব্যাথা করে। বমির ভাব থাকে।

হার্ট এটাকের কারণ

অধিকাংশ হার্ট এটাক হয় হার্টের যেসব রক্তনালি বা ধমনি রক্ত পরিবহন করে তার কোন একটাতে অতিরিক্ত চর্বি জমে ব্লকেজ সৃষ্টি হলে। অর্থাৎ ধমনি ঠিকভাবে রক্ত পরিবহন করতে না পারলে। জমা হওয়া অতিরিক্ত চর্বিকে প্লাক বলা হয়। 

এর অন্য নাম এথেরোস্ক্লেরোসিস। হার্টের স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ এই প্লাকের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় যার ফলে হার্টের পেশি ঠিকমত রক্ত প্রবাহ পায় না।

কিন্তু হার্টের ধমনিতে ব্লকেজ ছাড়াও হার্ট এটাক হতে পারে। সেসব কারণ হল -

  • রক্তনালির খিচুনি : রক্তনালির পেশিগুলো রক্তপ্রবাহের জন্য শরীরের পেশিগুলোর গঠন অনুযায়ী কখনো সংকুচিত আবার কখনো প্রশস্ত হয়। এই সংকোচ প্রসারণেও অনেক সময় রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
  • রেয়ার মেডিকেল কন্ডিশন : এমন অবস্থায় হয়ত কোন রোগের কারণে ব্লাড ভেসেল অস্বাভাবিকভাবে সংকীর্ণ হয়ে যায়। অনেক সময় ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্সের কারণেও হার্ট এটাক হতে পারে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বলতে শরীরের অত্যাবশ্যকীয় মিনারেলস যেমন পটাশিয়ামের পরিমাণ কম বা বেশি হলে হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত খাবারদাবার রুটিন মাফিক না হলে, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস হার্ট এটাকের আরেকটি বড় কারণ।
  • লিঙ্গভেদে হার্ট এটাকের নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে যেমন অধিকাংশ পয়তাল্লিষোর্ধ পুরুষের ক্ষেত্রে এর ঝুকি দেখা দেয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ পেরোলেই এর ঝুঁকি দেখা দিতে পারে, অথবা মেনোপজের (নারীদেহের এমন এক শারীরিক অবস্থা যখন মাসিক একেবারে বন্ধ হয়ে যায়) পর।
  • হার্ট এটাকের আরেকটি কারণ হল পারিবারিক ইতিহাস থাকা। আপনার বাবা, মা অথবা ভাই ইতিপূর্বে কারো হার্ট এটাক ডায়াগনোজড হলে আপনার রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • হার্ট এটাকের গুরুত্বপূর্ণ কারণের মধ্যে একটি হল লাইফস্টাইল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এই অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইলই হার্ট এটাক ঘটায়। অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল বলতে আপনি যদি শারীরিকভাবে কর্মঠ না হন। লবণ, মিষ্টি এবং চিনির মধ্যে আগ্রহ বেশি থাকলে। সবচেয়ে খারাপ হয় যদি আপনার ধূমপানের অভ্যাস থাকে অথবা ভ্যাপিং। অতিরিক্ত অ্যালকোহলে আসক্তি।
  • শরীরের অন্যান্য রোগও হার্ট এটাকের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। যেমন, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, হাই কোলেস্টেরলের ঝুঁকি, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি।

হার্ট এটাক যেভাবে ডায়াগনোজ (নির্ণয়) করা হয়

হার্ট এটাকের রোগীরা হয়তো কোন এক সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে বা বুকে প্রচন্ড ব্যাথা করছে বলে অনুভূতি প্রকাশ করে। সে অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডাক্তার প্রাথমিকভাবে হার্ট এটাক ডায়াগনোজ করে। 

তবে হার্ট এটাক ডায়াগনোজিংয়ের ল্যাব সিস্টেম ভিন্ন। চিকিৎসক প্রথমে আপনার হার্ট এটাকের প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। যেমন, ব্যাথা কতটা তীব্র ছিল বা এর আগে কখনো এরকম হয়েছিল কিনা এসব। 

ল্যাব টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের কেমিকেল মার্কআপ দ্বারা ডাক্তার আপনার রক্তের অবস্থা জানেন। আরেক ধরনের ল্যাব টেস্ট আছে যাকে বলা হয় হার্ট-স্পেসিফিক ডায়াগনোস্টিক টেস্ট, যেটি রক্তের ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটি রেকর্ড করে। ডাক্তার ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমেও হার্ট এটাক ডায়াগনোজ করে থাকেন। 

এই টেস্টের মাধ্যমে হার্টের রক্ত প্রবাহের বাঁধা কোন জায়গায় সেটি কম্পিউটার স্ক্রীনে ডাক্তার দেখতে পান এবং সেই অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করানো হয়।

হার্ট এটাক ডায়াগনোজ করতে কোন পরীক্ষাটি করতে হবে ??

সর্বপ্রথম, হার্ট এটাকের সিম্পটম আছে এমন যে কেউ বিভিন্ন ফিজিক্যাল টেস্ট যেমন হাতের পালস চেক করা, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যাচাই করা, ব্লাড প্রেসার, হার্ট এবং ফুসফুসের শব্দ শোনার মতো সব ফিজিক্যাল টেস্টে যাওয়া উচিত।

প্রাথমিকভাবে এসব করানোর পর অন্যান্য টেস্টসমূহ করতে হয় যেমন ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম।

ইসিজি 

হার্ট এটাক নির্ণয়ে ইসিজি টেস্ট
হার্ট এটাক নির্ণয়ে ইসিজি

ইমারজেন্সি হার্ট এটাক প্যাশেন্টদের এটিই প্রথম টেস্ট যা সর্বপ্রথম করানো হয়। ইলেকট্রোড নামের কতগুলো সেন্সর রোগীর বুকের স্কিনে লাগানো হয়।সেন্সরগুলো হার্টের ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটির তরঙ্গ আকারে একটি প্রিন্টআউট তৈরি করে কম্পিউটার স্ক্রিনে।

STEMi এবং NON-STEMI হার্ট এটাক

হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের ওয়েভ দুটি অংশে বিভক্ত হয় এবং এই ওয়েভ শুরু হয় P দিয়ে শেষ হয় U দিয়ে। ওয়েভ স্ট্রাকচারের একটি স্বতন্ত্র ওয়েব আমাদের চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হৃৎপিণ্ডের নিচের দুই প্রকোষ্ঠের ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটি শো করে যাকে ST segment বলা হয়। 

সাধারণত, ST segment এর ইলেকট্রিক্যাল ওয়েব খুবই ফ্ল্যাট থাকে অর্থাৎ সমান থেকে থেকে যায়। কিন্তু যখনই হার্ট এটাক হয় তখন ঐ দুই প্রকোষ্ঠ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ওয়েব সিগন্যাল কম্পিউটারের স্ক্রিনে আগের চেয়ে অনেক লম্বা এবং দীর্ঘ হয়। ডাক্তাররা যাকে বলে ST-Elevation Myocardial Infarction বা STEMI হার্ট এটাক। 

হার্ট এটাক সাধারণভাবে দুটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত যেমন STEMI হার্ট এটাক এবং non STEMi হার্ট এটাক। তার মধ্যে STEMI হার্ট এটাক সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। 

ব্লাড টেস্ট 

হার্ট এটাকের সময় আমাদের হৃৎপিণ্ডের হৃৎপেশির কোষ মারা যায়। যার কারণে রক্তপ্রবাহে কোন একটি কেমিক্যালের স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি ঘাটতি দেখা যায়। ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে ঐ কেমিক্যালটি শনাক্ত করে তারপর হার্ট এটাকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

তবে আরও কিছু টেস্ট আছে যেগুলো দিয়ে আসলে কম্পিউটার জেনারেটেড হৃৎপিণ্ডের ইমেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেস্টগুলো হল :

ইকোকার্ডিওগ্রাম 

এ পরীক্ষা আপনার হৃৎপিন্ডের তথা হার্টের কোথাও ব্লকেজ ( চর্বি জমে রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হওয়া ) থাকলে সেটি ধরিয়ে দিবে। এটি করা হয় হাই-ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড ওয়েভের মাধ্যমে। ঠিক যেভাবে বাদুর রাতে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে তার সামনে কোথাও বাধা আছে কিনা তা নির্ধারণ করে। 

নির্দিষ্ট আল্ট্রাসোনিক তরঙ্গটি আপনার হার্টের বিভিন্ন স্থানে গমন করবে এবং হার্টের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন স্পিডে প্রবেশ করে হার্টের ভিতরের এবং বাইরের একটি ছবি কম্পিউটার স্ক্রিনে জেনারেট করবে। 

হার্ট এটাকের চিকিৎসা যেভাবে করা হয়

হার্ট এটাকের চিকিৎসা হল ব্লক হয়ে যাওয়া হৃৎপেশিগুলোতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে বিভিন্ন উপায় যেমন স্বাভাবিক ওষুধ সেবন থেকে সার্জারি করতে হতে পারে। নিচে বর্ণিত উপায়গুলো এর মধ্যে অন্যতম -

অক্সিজেন দেওয়া 

আরো অন্যান্য অসুখের মতো হার্ট এটাকেও রোগীর অক্সিজেন নিতে কষ্ট হয় কারণ হৃৎপেশিগুলোতে অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায়। তাই মুখে একটি অক্সিজেন মাস্কের সাহায্যে রোগীকে সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন দেওয়া হয়। এভাবে রক্তে অক্সিজেনের পরিবহন মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং হার্টের উপর থেকে প্রেশার কমে।

মেডিকেশন বা ওষুধ সেবন ( ডাক্তাররা অনেক সময় সাজেস্ট করে )

এন্টি-ক্লটিং ওষুধ 

এসব হলো এসপিরিন জাতীয় ওষুধ যেগুলো রক্তকে পাতলা করতে সহায়তা করে।

নাইট্রোগ্লিসারিন

বুকের ব্যাথা উপশমে নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যাবহার করা হয়। এর কার্যকারিতা হলো, এটি রক্ত পরিবহনকারী শিরা ধমনীগুলোকে প্রশস্ত করে যার ফলে রক্ত পরিবহন আরো সহজ হয়।

থ্রম্বোলাইটিক বা ক্লট বিধ্বংসী ওষুধ

ক্লট হলো সেই কালপ্রিট যার কারণে হার্ট এটাক হয়। হার্টের শিরা বা ধমনীগুলোতে চর্বি জমে গিয়ে রক্তনালিগুলো ব্লক হয়ে যায়। এই জমে শক্ত হয়ে যাওয়া চর্বিগুলোই হলো ক্লট। হার্ট এটাকের ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই থ্রম্বোলাইটিক ওষুধগুলো প্রদান করতে হয় যেগুলো ক্লটকে ভেঙ্গে ফেলে।

এন্টি-এরিথমিয়া মেডিকেশন

এরিথমিয়া হলো হার্টের স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন রত অবস্থা। কিন্তু স্বাভাবিক স্পন্দন অনেক সময় ঠিক থাকে না। তখন এন্টি-এরিথমিয়া ওষুধগুলো প্রয়োগ করা হয়।

ব্যাথা নিরাময়কারী ওষুধ 

ব্যাথা নিরাময়ের জন্য সর্বোপরি যে ওষুধটি ব্যবহার করা হয় তা মরফিন। মরফিন দিলে কিছু সময়ের মধ্যেই ব্যাথা কমে যায়।

পারকিউটেনাস করোনারি ইন্টারভেনশন বা PCI

ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপেশিতে ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক করার পদ্ধতিকে বলা হয় পারকিউটেনাস করোনারি ইন্টারভেনাস বা সংক্ষেপে PCI। এই পদ্ধতিতে একটি ক্যাথেটার বেইজড ডিভাইস ব্যাবহার করা হয়। তারপর ক্যাথেটার সহ সেই ডিভাইসটি আপনার শরীরের কোন মেজর শিরা বা ধমনিতে একটি ছিদ্র করে ঢুকানো হয়। 

তারপর এই শিরা বা ধমনি বরাবর ক্যাথেটারটি চালনা করে হার্টের ব্লকড আর্টারিতে (ধমনি) আনা হয়। ব্লকেজের জায়গায় ক্যাথেটারটি পৌঁছানোর পর, ক্যাথেটারের মাথায় আগে থেকেই লাগানো একটি বেলুন ফোলানো হয়। যার ফলে আর্টারিতে ব্লকেজের ঐ জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।

PCI টেস্ট
হার্ট এটাকের চিকিৎসায় PCI পদ্ধতি

PCI একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও এটি করার পর একটি ভালো আউটকাম আসার সম্ভাবনা থাকে। হার্ট এটাক হয়েছে এমন প্যাশেন্ট ইমার্জেন্সিতে আসলে সাধারণত প্রথমে তাকে PCI করানো হয়। PCI এ সাধারণত বেলুন দিয়ে ফোলানোর পর জালের মতো পদার্থে তৈরি টিউড আকৃতির একটি স্ট্যান্ট থাকে। 

স্টেন্টটি ব্লকেজের জায়গাটিকে প্রশস্ত অবস্থায় ধরে রাখে ফলে একই জায়গায় আর ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অনেক সময় স্ট্যান্টে কিছু ওষুধ লাগানো থাকে যার ফলে ব্লকেজের জায়গায় অতিরিক্ত কোন টিস্যু গড়ে উঠতে পারে না।

করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং বা CABG

এটি হার্ট এটাকের আরেক ধরনের সার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতি। যাদের হার্টে তীব্র ব্লকেজ তাদের এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটিকে অনেক সময় ওপেন হার্ট সার্জারি বলা হয়। 

CABG সার্জারি
হার্ট এটাকের চিকিৎসায় সবচেয়ে কঠিন CABG বা ওপেন হার্ট সার্জারি

এক্ষেত্রে শরীরের অন্য কোন অংশ যেমন বাহু, পা ইত্যাদি অংশ থেকে ধমনী সংগ্রহ করে বুকের ক্ষতিগ্রস্থ ধমনীর রক্ত সঞ্চালনকে সংগ্রহ করা ধমনী দিয়ে চালনা করা হয়। খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ সার্জারি এটি।

আপনি কি হার্ট এটাক প্রতিরোধ করতে পারেন ?

স্বাভাবিকভাবেই, অনেক কিছুই আছে যার মাধ্যমে আপনি হার্ট এটাক প্রতিরোধ করতে পারেন। কিন্তু কিছু বিষয় আপনার হাতে নেই যেমন আপনার পারিবারিক ইতিহাস। আপনার পরিবারে কেউ হার্ট এটাকের প্যাশেন্ট থাকলে হার্ট এটাক প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আপনি এর শিকার হতে পারেন। 

তবে একমাত্র প্রচেষ্টাই পারে আপনাকে ভবিষ্যতে ঘটা হার্ট এটাক থেকে বাঁচাতে এবং হার্ট এটাক একবার হয়ে গেলে পরবর্তীতে তার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে।

যদিও কিছু বিষয় আছে যা আপনার হাতের বাইরে কিন্তু এমন অনেক কিছুই আছে যা দিয়ে আপনি হার্ট এটাক আপনি নিজেই প্রতিরোধ করতে পারেন। তার মধ্য থেকে -

সিডিউল চেকআপ

প্রাইমারি কেয়ার প্রোভাইডারের কাছে অথবা বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে আপনি অন্তত বছরে একবার হার্ট চেকআপ করাতে পারেন। এ ধরনের চেকআপে সামনে সংঘটিত অনেক বিপদের লক্ষণই হয়তো আপনার চোখের সামনে উঠে আসতে পারে, যা আপনি হয়তো এখনো অনুভব করছেন না। 

যেমন আপনার ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার লেভেল, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে আপনি সচেতন হতে পারবেন।

তামাক ছেড়ে দেওয়া

তামাক সেবন করলে আপনার জন্য হার্টের বিভিন্ন রোগ ছাড়াও আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। তামাক এবং বিভিন্ন ভ্যাপিং প্রোডাক্ট ছেড়ে দেওয়ার মধ্যেই আপনার মুক্তি। তাই কষ্ট হলেও নিজের লাভের জন্য এসব ছেড়ে দেওয়া উচিত।

নিয়মিত ব্যায়াম

সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও ২০ - ৩০ মিনিট ঘামঝরা পরিশ্রম করা।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

মানবদেহ অতিরিক্ত কোন কিছুই পছন্দ করে না। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে শরীরের ওপর চাপ কম পরবে। এজন্য আপনি কোন প্রাইমারি কেয়ার প্রোভাইডারে গিয়ে আপনার উচ্চতা বা অন্যান্য প্যারামিটার অনুযায়ী আপনার সঠিক ওজন কত হতে পারে জেনে নিয়ে ব্যায়ামের মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার ওজনে পৌঁছাবেন। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর কারণ অতিরিক্ত ওজন।

হার্ট এটাকের ঝুকি কমাতে গিয়ে একেবারে আপনার সম্পূর্ণ লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে ফেলতে হবে এমন নয়। তবে হার্ট এটাক একবার ঘটে গেলে ডাক্তার আপনাকে কার্ডিয়াক রিহেবিলিয়েশন প্রোগ্রামে যোগ দিতে বলতে পারে। 

এ ধরনের প্রোগ্রাম যেকোন প্যাশেন্টের জন্য খুবই উপকারী। কারণ আপনাকে একটি কাউন্সেলিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হার্ট এটাক একবার ঘটলে দ্বিতীয়বার ঘটার সম্ভাবনা বেশি। রিহেবিলিয়েশনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ঘটার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। 

যেমন এ ধরনের প্রোগ্রামে থাকলে আপনাকে হার্ট চেকআপ, কোলেস্টেরল কমানো, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদির জন্য বলা হবে এবং নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হবে। সর্বোপরি, এটি খুবই উপকারী।

হার্ট এটাকের মত কন্ডিশন ঘটে গেলে আপনি কি করতে পারেন ?

আপনার অতীতে একবার হার্ট এটাক ঘটে থাকলে দ্বিতীয়বার ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে নিয়মিত মনিটরিংয়ে এবং কেয়ারিংয়ে থাকতে বলবে। যেমন -

হার্ট স্ক্যানিং

এটি হার্ট এটাক চিহ্নিতকরণের মতোই একই পদ্ধতিতে করা হয়। হার্ট স্ক্যানিং এর মাধ্যমে আপনার হার্টের এটাক হওয়ায় এর প্রভাব কতটুকু পড়েছে এবং হার্ট পারম্যানেন্টলি ডেমেজ কিনা তা চেক করা হয়। তাছাড়া হার্টের ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক আছে কিনা তাও হার্ট স্ক্যানিং এর মাধ্যমে যাচাই করা হয়।

স্ট্রেস টেস্ট

এই টেস্টটি করা হয় হার্ট যখন খুব বেশিই কাজ করে। যেমন হার্ড ওয়ার্ক করার সময় বা দৌড়ানোর সময়। অর্থাৎ এ ধরনের চাপপূর্ণ অবস্থায় হার্ট কেমন কাজ করে তা দেখার জন্য হার্টের স্ট্রেস টেস্ট করানো হয়। টেস্টটি করানোর সময় আপনাকে হয়তো একটি স্থানে জায়গা পরিবর্তন না করে দৌড়াতে দিয়ে করা হবে।

চিকিৎসার কত সময় পর আপনি সুস্থতা অনুভব করবেন ?

স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা নেওয়ার পর হার্ট এটাকের লক্ষ্মণ বা চিহ্নগুলো কমে আসে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে দূর্বলতা বা অবসাদগ্রস্ততা থাকতে পারে। সেসব বিশ্রাম বা মেডিকেশনের (ওষুধ প্রয়োগ) মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যায়।

তবে চিকিৎসার উপর ভিত্তি করে আপনার সম্পূর্ণ সেরে ওঠা পুরোটাই নির্ভর করে। স্বাভাবিক হার্ট এটাকে আপনাকে হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ দিন থাকতে হতে পারে। যে ধরনের ট্রিটমেন্টে সেরে উঠতে এভারেজ যত দিন লাগতে পারে -

ওষুধ প্রয়োগে

হার্ট এটাক যদি তীব্র না হয় তাহলে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ছয় দিন থাকতে হতে পারে।

PCI

PCI কি তা আগেই বর্ণনা করা হয়েছে। সার্জারির চেয়ে PCI করে সেরে ওঠা সহজ। PCI করলে হাসপাতালে সর্বোচ্চ চারদিন থাকতে হতে পারে।

CABG

এটি হলো হার্টের মেজর সার্জারি। হার্ট এটাক যদি তীব্র বা ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে হয় তাহলে CABG করানো হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের সার্জারিতে সেরে উঠতে অনেক বেশি সময় লাগবে। হয়তো সাত দিনের মতো লাগতে পারে।

জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম কবে থেকে শুরু করতে পারব ?

হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর আপনি কাজকর্ম করার অবস্থায় আছেন কিনা নির্ভর করে আপনার হার্ট এটাকের ধরনের ওপর, কত আগে থেকে ট্রিটমেন্ট শুরু করা হয়েছে এবং আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর। তবে অধিকাংশ মানুষ হার্ট এটাক হওয়ার দুই সপ্তাহ বা তিনমাসের মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে পারে।

হার্ট এটাকের জটিলতাগুলো কি কি ?

হার্ট এটাকের ফলে যা ঘটতে পারে -

এরিথমিয়া

হার্টের স্বাভাবিক স্পন্দন ঠিক থাকে না। এটি একটি অস্বাভাবিক জটিলতা।

হার্ট ফেইলিউর

যদি হার্টের অধিকাংশ টিস্যুই মরে যায় তাহলে রক্ত পাম্প করার মতো শক্তি হার্টের থাকে না। যা পরবর্তীতে পরিস্থিতি হার্ট ফেইলিউরের দিকে নিয়ে যায়।

হার্ট ভালভ প্রবলেমস

যে জায়গায় হার্ট ডেমেজ হয়েছে সে জায়গার উপর নির্ভর করে সেখানকার হার্টের ভালভ বা কপাটিকাগুলো আক্রান্ত হতে পারে। এসব ঠিক করার জন্য ক্যাথেটার নির্ভর সার্জারিই একমাত্র অপশন।

সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট

এটি হল হঠাৎ হার্টের অক্ষমতা বা বৈকল্য যা অ্যারিথমিয়ার কারণে ঘটে।

হার্ট এটাকের পর সুস্থ হতে পুরুষ কিংবা মহিলা কার কম সময় লাগে ?

মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৪৫ এর নিচে, একই বয়সের পুরুষদের চেয়ে তাদের সেরে উঠতে কম সময় লাগে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ইস্ট্রোজেনের (নারীদেহ থেকে নিসৃত বিশেষ হরমোন) হার্ট রক্ষাকারী একটি প্রভাব আছে। যাই হোক, মেনোপজের (মাসিক যখন নারীদেহে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় তাকে মেনোপজ বলে। 

সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর নারীদেহে আর মাসিক হয় না) পরে ইস্ট্রোজেনের হার্টের প্রতি প্রতিরক্ষামূলক মনোভাব শেষ হয়ে যায়। তখন হার্ট এটাক প্রতিরোধে মহিলাদের অবস্থা পুরুষের চেয়ে খারাপ হয়।

  • মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৪৫ - ৬৫ এর মধ্যে তাদের হার্ট এটাক হওয়ার এক বছরের মধ্যে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের চেয়ে বেশি থাকে।
  • নারীদের যাদের বয়স ৬৫-র চেয়ে বেশি হার্ট এটাকের পর এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা পুরুষদের চাইতে বেশি থাকে।

আপনি যদি এতটুকু পর্যন্ত ধৈর্য্য নিয়ে পড়েন তাহলে আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করি পড়ে নিরাশ হতে হয় নি। হার্ট এটাক সম্পর্কে মাধ্যমিকভাবে যা জানার জানতে পেরেছেন। সর্বোপরি, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আপনার সচেতনতাই আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।

Source:  Cleveland Clinic 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url