মানব শারীরতত্ত্ব : চলন ও অঙ্গচালনা HSC ( Full Admission Review )

HSC বোর্ড পরীক্ষা বা এডমিশনের জন্য চলন ও অঙ্গচালনা চ্যাপ্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে বেশ কিছুসংখ্যক অস্থি তরুণাস্থির নাম এবং বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তোমাদের অনেকের কাছেই চলন ও অঙ্গচালনা চ্যাপ্টারটি খুবই কঠিন মনে হয়। তাই বোর্ড পরীক্ষা বা এডমিশনেও এখান থেকে MCQ আসলেও তোমরা আন্সার করতে পার না। কিন্তু এই আর্টিকেলে সব অপ্রয়োজনীয় আলোচনা বাদ দিয়ে শুধু এডমিশন এবং MCQ এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোই তুলে ধরা হয়েছে। আরো নির্দিষ্টভাবে তোমাদের বুঝার সুবিধার্থে চলন ও অঙ্গচালনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে রেড কালার দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। আশা করি এর বাইরে পরীক্ষায় MCQ আসার সম্ভাবনা নেই। এই চ্যাপ্টারটির উপর ফুল এডমিশন নোট নিয়েই এই আর্টিকেলটি। মনোযোগ দিয়ে প্রত্যেকটি লাইন ভালোমত বুঝে পড়লে MCQ এর জন্য তুমি কোথাও আটকাবে না।

মানব কঙ্কালতন্ত্র

  • কঙ্কালতন্ত্র ভ্রুণীয় মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত অস্থি ও তরুনাস্থি নির্মিত যোজক টিস্যু দিয়ে গঠিত।
  • নখ , দাত এবং লোম বহিঃকঙ্কালতন্ত্রের অংশ।
  • অস্থি , তরুণাস্থি এবং লিগামেন্টের সমন্বয়ে গঠিত অন্তঃকঙ্কালতন্ত্র
  • ল্যারিংক্স এর তরুণাস্থী , ট্রাকিয়া এবং ব্রঙ্কাই প্রভৃতি স্পাংকনিক কঙ্কালতন্ত্রের উদাহরণ।
চলন ও অঙ্গচালনা HSC

কঙ্কালতন্ত্রের শারীরবৃত্তীয় কাজ

মানব কঙ্কালতন্ত্রের প্রধান কাজ হলো মানবদেহের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক , ফুসফুস , হৃৎপিণ্ড ইত্যাদিকে সুরক্ষা দেওয়া।

মানবদেহের রক্ত উৎপাদনকারী প্রধান টিস্যু লাল অস্থিমজ্জা। লোহিত কণিকা উৎপন্ন হয় পাজর , কশেরুকা , স্টার্নাম , করোটি , ফিমার , হিউমেরাস থেকে । লাল অস্থি মজ্জা থেকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২৬ লক্ষ লোহিত কণিকা উৎপন্ন হয় । দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অংশ নেয় অস্থির রেটিক্যুলো এন্ডোথেলিয়ালতন্ত্র । অস্থি ক্যালসিয়াম , ফসফরাসম্যাগনেশিয়াম সঞ্চয় করে । অস্থির কোষ থেকে অস্টিওক্যালসিন হরমোন ক্ষরিত হয় । দেহের রাসায়নিক শক্তির আধার পীত অস্থিমজ্জার অ্যাডিপোজ কোষ।

কঙ্কালতন্ত্রের উপাদান

  1. অস্থি 
  2. তরুণাস্থি (Cartilage)
  3. লিগামেন্ট
  4. টেনডন
  5. অস্থিসন্ধি

তরুণাস্থি কোষগুলো কন্ডিন নামক ম্যাট্রিক্সে ছড়ানো থাকে । একটি অস্থি অন্যটির সাথে যুক্ত থাকে লিগামেন্টের মাধ্যমে । অস্থি ও পেশির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে টেনডন । 

কঙ্কালতন্ত্রের শ্রেণীবিভাগ

অক্ষীয় কঙ্কাল

করোটি , মেরুদন্ড এবং বক্ষপিঞ্জর অক্ষীয় কঙ্কালের অন্তর্ভুক্ত । 

করোটি : মাথার খুলির অস্থি এবং মুখমণ্ডলের অস্থিগুলো করোটির অন্তর্ভুক্ত । ২৯ টি অস্থি নিয়ে করোটি গঠিত । 

করোটিকা বা মাথার খুলি : ছয় ধরনের মোট আটটি সুগঠিত অস্থি নিয়ে করোটিকা গঠিত । অস্থিগুলো সূচারসন্ধির মাধ্যমে এক অপরের সাথে সংলগ্ন থাকে । তার মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ অস্থিগুলো নিচে দেওয়া হল।

করোটির অস্থি

  • ফ্রন্টাল অস্থি (১টি) : কপাল গঠনকারী অস্থি
  • প্যারাইটাল অস্থি (২টি) 
  • অক্সিপিটাল অস্থি (১টি) : এই অস্থির নিচের দিকে ফোরামেন ম্যাগনাম নামক একটি ছিদ্র থাকে যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক সুষুম্নাকান্ডের সাথে যুক্ত।

মুখমণ্ডলীয় অস্থি (Facial bones) : ৮ ধরনের ১৪ টি অস্থি নিয়ে মুখমন্ডলীয় অস্থি গঠিত। এর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ অস্থিগুলো নিচে দেওয়া হল।

  • ম্যাক্সিলা (Maxilla) : ২টি , উর্ধ্বচোয়াল গঠনকারী অস্থি ।
  • ম্যান্ডিবল (Mandible) : ১টি , নিম্নচোয়াল গঠনকারী অস্থি ।
  • ল্যাক্রিমাল অস্থি (Lacrymal bone) : ২টি , এটি ন্যাসো-ল্যাক্রিমাল নালিপথ গঠনকারী অস্থি এবং করোটির ক্ষুদ্রতম অস্থি

প্রত্যেক কানে তিনটি করে মোট ছয়টি অস্থি আছে । জিহ্বার গোড়ার দিকে হাইঅয়েড নামের অস্থি থাকে । 

মেরুদন্ড

মেরুদণ্ডকে শিরদাঁড়া , স্পাইন বা স্পাইনাল কলাম বলা হয় । ৩৩ টি অস্থিখন্ড নিয়ে মেরুদন্ড গঠিত । প্রত্যেক অস্থিখন্ডকে কশেরুকা বলে ।

কশেরুকার গঠন

কশেরুকার গাঠনিক অস্থিগুলো হলো



  1. সেন্ট্রাম বা ভার্টিব্রাল বডি : এটি কশেরুকার বৃহত্তম অংশ । কোমলাস্থি নির্মিত সিমফাইসিস দিয়ে কশেরুকাগুলো একটির সাথে অন্যটি আটকে থাকে 
  2. আর্চ
  3. ট্রান্সভার্স প্রসেস
  4. ল্যামিনা
  5. আর্টিকুলার প্রসেস
  6. স্পাইনাস প্রসেস

কশেরুকার ছিদ্রপথ ও নালি

ইন্টারভার্টিব্রাল ফোরামেনের আরেক নাম নিউরাল ছিদ্র । সকল কশেরুকার ছিদ্র মিলে ভার্টিব্রাল ক্যানেল তৈরি করে । সেখানেই থাকে মেনিনজেস সহ সুষুম্নাস্নায়ু

কশেরুকার প্রকারভেদ

  1. সারভাইকাল বা গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা
  2. থোরাসিক বা বক্ষদেশীয় কশেরুকা
  3. লাম্বার বা কটিদেশীয় কশেরুকা
  4. স্যাক্রাল বা শ্রোণীদেশীয় কশেরুকা
  5. কক্কিজিয়াল বা পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা

বক্ষপিঞ্জর

স্টার্নাম : এটি তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা ম্যানুব্রিয়াম, দেহ এবং জিফয়েড প্রসেস।

  1. ম্যানুব্রিয়াম : এর সাথে বক্ষ অস্থি ক্ল্যাভিকল এবং প্রথম পর্শুকা সন্ধি তৈরি করে।
  2. দেহ : এর সাথে ২য় থেকে ৭ম পর্শুকা সন্ধি তৈরি করে।
  3. জিফয়েড প্রসেস : স্টার্নামের সবচেয়ে নিচের অংশ। প্রথম দিকে তরুণাস্থি নির্মিত হলেও প্রাপ্তবয়সে এটি অস্থিতে পরিণত হয়।

পর্শুকা এবং স্টার্নামের মধ্যে সংযোগ সাধনকারী অংশ কোস্টাল কার্টিলেজ। এটি তরুণাস্থিময়।

পর্শুকার প্রকারভেদ

  1. প্রকৃত পর্শুকা সংখ্যায় ৭ জোড়া
  2. অপ্রকৃত পর্শুকা ৩ জোড়া। এগুলো ৮ম, ৯ম১০ম জোড়া।
  3. ভাসমান পর্শুকা ২ জোড়া। এগুলো একাদশ ও দ্বাদশ বক্ষদেশীয় কশেরুকা থেকে উৎপন্ন হয়।

উপাঙ্গীয় কঙ্কাল

উপাঙ্গীয় কঙ্কাল বলতে দুই বাহু দুই পা এবং শ্রোণি অস্থিচক্রকে বোঝায়। দেহের উভয়পাশের ৩২ টি করে ৬৪ টি অস্থি অর্ধাঙ্গের অন্তর্গত।

বক্ষ-অস্থিচক্র

ক্ল্যাভিকল এবং স্ক্যাপুলা নিয়ে বক্ষ অস্থিচক্র গঠিত। ক্ল্যাভিকল দেখতে ইটালিক f আকৃতির এবং এখানে এক্রোমিয়াল প্রসেস থাকে। অন্যদিকে স্ক্যাপুলায় আছে কোরাকয়েড প্রসেস, অ্যাক্রোমিয়াল প্রসেস এবং গ্লিনয়েড গহ্বরগ্লিনয়েড গহ্বরে হিউমেরাসের মস্তক আটকানো থাকে।

উর্ধ্ববাহুর অস্থি

প্রতিটি উর্ধ্ববাহু ছোট বড় ৩০ টি অস্থি নিয়ে গঠিত। 

হিউমেরাস : উর্ধ্ববাহুর (হাতের বাহু) প্রথম অস্থি এটি। এখানে আছে ছোট ও বড় বিভিন্ন টিউবারকল। টিউবারকলের নিচের অংশকে বলে সার্জিক্যাল গ্রীবা। হিউমেরাসের মধ্যভাগে পেশি সংযুক্তির জন্য আছে ডেলটয়েড রিজ

রেডিয়াস ও আলনা : আলনার উর্ধ্বপ্রান্তে আছে করনয়েড প্রসেস এবং ওলেক্রেনন প্রসেস। আলনার নিম্নপ্রান্ত স্টাইলয়েড প্রসেস এ বিভক্ত।

কার্পাল অস্থি : দু'সারিতে চারটি করে মোট আটটি কার্পাল অস্থিতে কব্জি গঠিত। এর গোড়ার দিকের সারিতে থাকে স্ক্যাফয়েড, লুনেট, ট্রাইকুয়েট্রালপিসিফর্ম অস্থি। প্রান্তের দিকে থাকে ট্র্যাপেজিয়াম, ট্র্যাপেজয়েড, ক্যাপিটেটহ্যামেট অস্থি।

মেটাকার্পাল অস্থি : হাতের তালু গঠনকারী ৫টি অস্থি হলো মেটাকার্পাল অস্থি।

ফ্যালাঞ্জেস : হাতের আঙ্গুল গঠনকারী অস্থি। বৃদ্ধাঙ্গুলে ২টি এবং অন্য আঙ্গুলগুলোতে ৩টি করে ফ্যালাঞ্জেস থাকে।

নিম্নাঙ্গের অস্থিসমূহ (শ্রোণি অস্থিচক্র)

ইলিয়াম, ইশ্চিয়ামপিউবিস নিয়ে শ্রোণি অস্থিচক্র গঠিত। শ্রোণি অস্থিচক্রের অবটুরেটর ছিদ্রকে পিউবিক ও ইশ্চিয়াল রেমি ঘিরে রাখে। অ্যাসিটাবুলামে ফিমারের মস্তক আটকানো থাকে।

নিম্নবাহুর অস্থি

ফিমার : এটি মানবদেহের সবচেয়ে দীর্ঘ অস্থি। এর উর্ধ্বপ্রান্তে ট্রোক্যান্টার অবস্থিত। ফিমারের প্রান্তে প্যাটেলা নামক ত্রিকোণাকার অস্থি আছে। প্যাটেলা হলো সিসাময়েড অস্থি।

টিবিয়া ও ফিবুলা : নিম্নবাহুর (পায়ের) মধ্যবর্তী দুটি অস্থি টিবিয়া ও ফিবুলা। টিবিয়ার দেহ ত্রিধারবিশিষ্ট। টিবিয়ার নিচে ম্যালিওসাস নামের উঁচু অংশ থাকে।

টার্সাল অস্থি : পদতল গঠনকারী অস্থি। ৫ ধরনের ৭ টি টার্সাস তিন সারিতে সজ্জিত থাকে। টার্সাসগুলো হলো - ট্যালাস, ক্যালকেনিয়াস, কিউবয়েড, নেভিকুলার ও ৩টি কুনিফর্ম

ফ্যালাঞ্জেস : প্রতি পায়ে মোট ১৪ টি করে ফ্যালাঞ্জেস বিদ্যমান।

অস্থি

অস্থি দুই প্রকার। যথা নিরেট অস্থি ও স্পঞ্জি অস্থি।

নিরেট বা কর্টিকেল অস্থি : মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্রের ৮০% অস্থি নিরেট অস্থি। নিরেট অস্থির ম্যাট্রিক্সের স্তরকে ল্যামেলি বলে। নিরেট অস্থির কেন্দ্রীয় নালিটি হচ্ছে হ্যাভারসিয়ান নালি। হ্যাভারসিয়ান নালি ও ল্যামেলির সমন্বয়ে হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র বা অস্টিওন গঠিত। ল্যাকুনা থেকে বের হওয়া সূক্ষ্ম নালিকাকে ক্যানালিকুলি বলে। ভকম্যানস ক্যানাল নামক নালিকা দিয়ে হ্যাভারসিয়ান নালিগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। অস্থির কেন্দ্রস্থলের গহ্বরটি মজ্জা গহ্বর। মজ্জা গহ্বর লাল বা হলুদ মজ্জায় পূর্ণ।

স্পঞ্জি অস্থি

কঙ্কালতন্ত্রের কঙ্কালতন্ত্রের মোট ওজনের ২০% স্পঞ্জি অস্থি। স্পঞ্জি অস্থির গাঠনিক ও কার্যকরী একক ট্রাবেকুলা। ল্যামিনি, অস্থি কোষ বা ল্যাকুনি এবং ক্যানালিকুলির সমন্বয়ে ট্রাবেকুলা গঠিত। ট্রাবেকুলাসমূহের মধ্যবর্তী স্থান লোহিত অস্থিমজ্জা দ্বারা পূর্ণ থাকে। শিশুদের প্রায় সকল অস্থি স্পঞ্জি প্রকৃতির।

গঠন ভিত্তিতে অস্থির প্রকারভেদ

  • লম্বা অস্থি : এর উদাহরণ হিউমেরাস ও ফিমার।
  • খাটো বা ক্ষুদ্র অস্থি : উদাহরণ করতল ও পদতলের অস্থি।
  • চাপা অস্থি : উদাহরণ স্ক্যাপুলা, পর্শুকা, স্টার্নাম, করোটির প্যারাইটাল অস্থি।
  • অনিয়ত অস্থি : উদাহরণ কশেরুকা।
  • বায়ুপূর্ন অস্থি : উপরের চোয়াল বা ম্যাক্সিলা।

অস্থি খনিজ পদার্থের আঁধার হিসেবে কাজ করে। মানব কঙ্কালতন্ত্রের সবচেয়ে ছোট অস্থি মেলিয়াসইনকাসস্টেপিস শ্রবণে অংশ নেয়।

 তরুণাস্থি

তরুণাস্থি গঠিত প্রচুর পরিমাণ মাতৃকা এবং স্বল্পসংখ্যক কোষ নিয়ে। তরুণাস্থির কোষগুলো পরিণত অবস্থায় কন্ড্রোসাইট নামে পরিচিত। তরুণাস্থির ম্যাট্রিক্সের তন্তুগুলোর মধ্যে কোলাজেন তন্তুই প্রধান। প্রতিটি তরুণাস্থি পেরিকন্ড্রিয়াম টিস্যু নির্মিত পাতলা আবরণ দিয়ে আবৃত। ফাইব্রোকার্টিলেজ দেহের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দৃঢ় তরুণাস্থি। কঙ্কালতন্ত্রের জৈব লুব্রিকেটর হিসেবে কাজ করে লুব্রিসিন নামক তরুণাস্থির গ্লাইকোপ্রোটিন। তরুণাস্তি মেরুদন্ডী প্রাণীদের ভ্রূণীয় কঙ্কাল এবং কনড্রিকথিস জাতীয় মাছের অন্তকঙ্কাল গঠন করে।

তরুণাস্থির প্রকারভেদ

গঠনগতভাবে চার ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়

  1. স্বচ্ছ বা হায়ালিন (Hyalin) তরুণাস্থি : এ ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায় মেরুদন্ডী প্রাণির অস্থি সন্ধিস্থল, পর্শুকার প্রান্তভাগ, নাসিকা, শ্বাসনালি, কর্ণকুহর ইত্যাদি স্থানে।
  2. স্থিতিস্থাপক বা পীত তন্তুময় (Yellow fibrous) তরুণাস্থি : বহিঃকর্ণ বা পিনা, ইউস্টেশিয়ান নালি, এপিগ্লটিস প্রভৃতি স্থানে এ ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়।
  3. শ্বেত তন্তুময় (White fibrous) তরুণাস্থি : দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে, অস্থির সাথে টেনডন বা লিগামেন্টের সংযোগস্থল প্রভৃতি স্থানে পাওয়া যায়।
  4. চুনময় বা ক্যালসিফায়েড (Calcified) তরুণাস্থি : হিউমেরাস ও ফিমারের মস্তকে এ ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়।

পেশিটিস্যু (গঠন ও কাজ)

ভ্রুণীয় মেসোডার্ম থেকে পেশিটিস্যুর উৎপত্তি। পেশিকোষকে বলে মায়োসাইট যা মায়োব্লাস্ট (আদি পেশিকোষ) থেকে উৎপন্ন হয়। প্রতিটি কোষ সারকোলেমা নামক ঝিল্লিতে আবৃত। মায়োফাইব্রিল (পেশিতন্তু) অ্যাকটিনমায়োসিন নামের দুধরনের সঙ্কোচি প্রোটিনে নির্মিত। চোখের পিউপিল সঙ্কোচনকারী পেশি, স্তনগ্রন্থি ও ঘামগ্রন্থির পেশি ভ্রুণীয় এক্টোডার্ম থেকে উৎপন্ন। পেশিটিস্যুর ৭৫ শতাংশ পানি।

ঐচ্ছিক পেশি

ঐচ্ছিক পেশি রৈখিকভাবে বিন্যস্ত বেশি তন্তু দিয়ে গঠিত। এদের আরেক নাম কঙ্কাল পেশি। টেন্ডন নামক টিস্যু দিয়ে ঐচ্ছিক পেশি অস্থির সাথে যুক্ত থাকে। এদের অবস্থান চক্ষু, চোয়াল, ওষ্ঠ, গলবিল, মধ্যচ্ছদা, পেট এবং ইন্টারকোস্টাল পেশি। পেশি তন্তুর প্রতিটি গুচ্ছ ফ্যাসিকুলাস। পেশি তন্তর তিনটি আবরণ যথাক্রমে এন্ডোমাইসিয়াম, পেরিমাইসিয়াম এবং এপিমাইসিয়াম। সারকোলেমা পেশিকোষের নিজস্ব কোষঝিল্লি। পেশিকোষে বহু নিউক্লিয়াস থাকে। পেশিকোষের অ্যাকটিন ফিলামেন্টে ট্রপোমায়োসিন এবং ট্রপোনিন নামক বর্তুলাকার প্রোটিন থাকে। মানবদেহে সর্বমোট ৬৫৬ টি ঐচ্ছিক পেশি থাকে। গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস সবচেয়ে বড় পেশি এবং স্টেপেডিয়াস সবচেয়ে ছোট পেশি। সবচেয়ে দীর্ঘ পেশি সারটোরিয়াস। পেশি প্রতিবর্তী ক্রিয়ায় সহায়তা করে।

কঙ্কালপেশির প্রকারভেদ

  1. ফ্লেক্সর পেশি : দেহের কোন অংশকে অন্য কোন অংশের ওপর ভাঁজ হতে সাহায্য করে। উদাহরণ- বাইসেপস পেশি
  2. এক্সটেনসর পেশি : ভাঁজ করা অংশকে পুনরায় সোজা করায়। উদাহরণ- ট্রাইসেপস পেশি
  3. অ্যাবডাকটর পেশি : দেহের কোন অংশকে দূরে যেতে সাহায্য করে। উদাহরণ - ডেলটয়েড পেশি।
  4. অ্যাডাক্টর পেশি : দেহের কোন অংশকে দেহঅক্ষের নিকটে আনতে সাহায্য করে। উদাহরণ - লাটিসিমাস ডরসি।

ডিপ্রেসর ম্যান্ডিবুলার পেশি ডিপ্রেসর পেশি কারণ এটি নিম্নচোয়ালকে নিচের দিকে নামায়। ম্যাসেটার পেশি লিভেটর পেশি কারণ এটি নিম্নচোয়ালকে উপর দিকে উঠায়। পাইরিফরমিস পেশি ফিমারকে ঘূর্ণনে সহায়তা করে তাই এটি রোটেটর পেশি।

অনৈচ্ছিক পেশি বা ভিসেরাল পেশি

মানুষের অভ্যন্তরে থাকে যেসব অঙ্গ যেমন পৌষ্টিকনালি, শ্বাসনালি, জরায়ু, রক্তনালি, মূত্রথলি এসব অঙ্গে অনৈচ্ছিক পেশি উপস্থিত।

অনৈচ্ছিক পেশির গঠন : 

এর কোষগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট এবং দৈর্ঘ্যে ১৫-২০০ মাইক্রোমিটার। কোষের চওড়া অংশের (ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস থাকে) ব্যাস ৮-১০ মাইক্রোমিটার। সারকোলেমা (কোষঝিল্লি) অস্পষ্ট। অনৈচ্ছিক পেশির নিঃসাড়কাল দীর্ঘস্থায়ী।

অনৈচ্ছিক পেশি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় --

  • পৌষ্টিকনালির পেরিস্ট্যালসিস
  • রক্তনালির অবিরাম সংকোচন-প্রসারণ
  • শ্বাসনালি ও রেচননালির নিয়মমাফিক সংকোচন প্রসারণ
  • হৃৎপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি

এই পেশি হৃৎপিণ্ডের প্রাচীর গঠন করে।হৃৎপিণ্ডের মধ্যবর্তী স্তর মায়োকার্ডিয়ামে এটির অবস্থান। হৃৎপেশিতে সারকোলেমা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক গঠন করে। প্রতিটি হৃৎপেশির কোষে ৫০০০ মাইটোকন্ড্রিয়া বিদ্যমান।

পেশি টানতে পারে কারণ পেশিতে অ্যাকটিনমায়োসিন প্রোটিন আছে। আবার, পেশিতে টান পড়ে কিন্তু ধাক্কা দেয় না।

লিভার

কাচি প্রথম শ্রেণির লিভার। প্রথম শ্রেণির লিভারে অল্প বল প্রয়োগে বেশি ফল পাওয়া যায়। মানবদেহে প্রথম শ্রেণির লিভার দূর্লভ।

দ্বিতীয় শ্রেণির লিভারের উদাহরণ ঠেলাগাড়ি। পায়ের আঙ্গুলের ডগায় দাড়ালে দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার তৈরি হয়।

তৃতীয় শ্রেণির লিভারের উদাহরণ নখ কাটার যন্ত্র। শরীরের ভাজ করা বাহু তৃতীয় শ্রেণির লিভার। দ্রুতগতির সঞ্চালন সুবিধা পাওয়া যায় তৃতীয় শ্রেণির লিভার থেকে।

হাড় ভাঙ্গা 

  • খেলাধুলার সময় বা সিড়ি বেয়ে পড়ে গেলে তীর্যক অস্থিভঙ্গ হতে পারে
  • সাধারণ অস্থিভঙ্গ হলো অস্থি কখনো চামড়া বিদীর্ণ করে বের হবে না।
  • হাড়ের টুকরা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসলে তা যৌগিক অস্থিভঙ্গ।
  • অস্থিসন্ধি, লিগামেন্ট ও টেন্ডন ক্ষতিগ্রস্ত হয় জটিল বা চাপা হাড়ভাঙ্গার ফলে।
  • একটি অস্থিসন্ধিতে অবস্থিত দুটি অস্থির মধ্যে একটি সরে গেলে তা হলো স্থানচ্যুতি।
এই হলো চলন ও অঙ্গচালনার MCQ এডমিশন নোট। প্রত্যেকটি লাইন MCQ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তোমরা এডমিশনের বা বোর্ড এক্সামের জন্য গুছানো একটি নোট পেয়েছ। তারপরেও যদি কোন কিছু লেকিংস দেখতে পাও যেখানে কিছু এড করার প্রয়োজন আছে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাও।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url